স্বাধীনতার সুফল ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র

আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনের প্রথম প্রহরে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার সূচনা করে। এরপরই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাসের মরণপণ সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশমাতৃকা হানাদারমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ জীবন উৎসর্গ করেন, অসংখ্য মানুষ আহত হন এবং সম্ভ্রম হারান বহু মা-বোন। আমাদের স্বাধীনতার ৫১তম বার্ষিকীতে আমরা বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধে প্রাণদানকারী শহিদদের। তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি তাদের পরিবারের প্রতিও আমরা জানাই সমবেদনা। নানাভাবে আহত হয়ে যারা বেঁচে রয়েছেনÑরাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তাদের প্রয়োজনীয় সেবা ও সম্মান প্রাপ্তির নিশ্চয়তাও প্রত্যাশা করি।

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বড় লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন। তিনটি মৌলিক লক্ষ্য ছিল সংগ্রামী জনতারÑসামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা ও সাম্য। স্বাধীনতা যেকোনো জাতির জন্য পরম আরাধ্য বিষয়। আত্মপ্রতিষ্ঠার অধিকার, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সুশাসন, বৈষম্যের অবসান প্রভৃতি ছিল স্বাধীনতার লক্ষ্য। শুরুতেই স্বাধীনতার তিনটি লক্ষ্যের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সেই ধারা অব্যাহত থাকেনি। 

স্বাধীনতা অর্জনকালের তুলনায় বর্তমানের উন্নয়ন ধারণায় অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। বিশেষত গত শতকের নব্বইয়ের দশকের পর থেকে ব্যাপকভাবে জোর দেয়া হয় মানব উন্নয়নে। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত ও ব্যাপক বিস্তার পরিবর্তন এনেছে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও। ক্ষেত্রবিশেষে এর প্রভাব পড়েছে আমাদের মূল্যবোধ ও জীবন-পদ্ধতিতে। এখনকার উন্নয়ন পরিকল্পনা স্বভাবতই গ্রহণ করতে হবে কিছুটা পরিবর্তিত বাস্তবতা মেনে নিয়ে। যুগোপযোগী পরিকল্পনা নেয়া গেলেই তা গণমানুষের উপকারে আসবে। উন্নয়ন নীতি-কৌশল যুগের চাহিদা ও সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলেই তা থেকে প্রত্যাশিত সুফল মিলবে। যেসব লক্ষ্য সামনে রেখে জাতির জনকের ডাকে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, সে লক্ষ্য অর্জনে আমাদের বহুদূর যেতে হবে। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন এখনও অধরা। এ কথা ঠিক ৫১ বছরে অর্থনৈতিকভাবে দেশ যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। তবে সামাজিক ও রাজনৈতিক অনৈক্য, দ্বিধাবিভক্তি ও দোষারোপের রাজনীতি আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ক্লেদাক্ত করেছে। তাই জাতীয় লক্ষ্য অর্জন ও অগ্রগতির জন্য সব মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও জাতীয় ঐক্য গড়ে তুললে দূরত্বও থাকবে না। এজন্য স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার নতুন শপথ নিতে হবে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সব ক্ষেত্রে সুশাসনও নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন নিশ্চিতে সর্বস্তরে রক্ষা করতে হবে মানবাধিকার। তাহলেই স্বাধীনতার সুফল পাবে সাধারণ মানুষ এবং দেশও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০