শিল্পঋণের ৪৯,২৬২ কোটি টাকাই খেলাপি

জয়নাল আবেদিন: কভিড-পরবর্তী সময়ে সচল হতে শুরু করেছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। একই সঙ্গে বাড়ছে ঋণ বিতরণ। তবে আনুপাতিক হিসাবে অনেকখানি পিছেয়ে আদায়ের হার। তাই ঋণের চেয়ে দ্রুত গতিতে বাড়ছে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ। এর জন্য বিশেষভাবে দায়ী শিল্প খাত। কারণ ব্যাংকের মোট ঋণ খেলাপির ৪৯ হাজার ২৬২ কোটি টাকা বা ৪৭ দশমিক ৭০ শতাংশই শিল্প খাত থেকে আসা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৯ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিল্প খাতে বিতরণ হয়েছে চার লাখ ২৯ হাজার ৪৭০ কোটি। সুতরাং ব্যাংকের মোট ঋণের ৩০ দশমিক ৪৭ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে শিল্প খাতে।

তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ তিন হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিল্প খাতের খেলাপি ছিল ৪৯ হাজার ২৬২ কোটি। হিসাব অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপির ৪৭ দশমিক ৭০ শতাংশই শিল্প খাতের অবদান।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে চার লাখ ২৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের একই (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) সময়ে ছিল তিন লাখ ৬১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৬১ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বা ১৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।

এদিকে শিল্পঋণ বিতরণের বিপরীতে আদায়ের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত শিল্প খাতে ঋণ আদায় হয়েছে তিন লাখ ৫১ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের একই সময়ে ছিল তিন লাখ ১৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতে ঋণ আদায় বেড়েছে ৩২ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিতরণ করা শিল্পঋণের মধ্যে ছয় লাখ ২৮ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এই অঙ্ক আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বকেয়া ছিল পাঁচ লাখ ৭২ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। শিল্প খাতে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণের অঙ্ক ৮৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের একই সময়ে ছিল ৭০ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। মেয়াদোত্তীর্ণের হার আগের বছরের তুলনায় ২০২১ সালে ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০ সালের জুন থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ ও প্রাদুর্ভাবের কারণে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ কমেছিল। তবে সরকারের বিশেষ প্রণোদনার ঋণপ্রবাহ বাড়ায় সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে বেসরকারি খাতে ঋণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। কভিডের তীব্রতা কমার পর দেশে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে বেসরকারি খাতের ঋণের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। টানা সাত মাস বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি চলতি বছরের জানুয়ারিতেও অব্যাহত ছিল। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১.০৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি।

এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এখন অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। তাই ব্যাংকের শিল্পঋণ বিতরণ বাড়ছে। বিশেষ করে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলো খুব ভালো ব্যবসা করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক ক্রয়াদেশ আসছে এখন। প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে গার্মেন্টস খাতে। তবে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সাবধানতার কোনো বিকল্প নেই। যারা নিয়মিত পেমেন্ট করেছে তাদেরই নতুন ঋণ দেয়া উচিত বলে মনে করেন কামাল হোসেন।

তিনি আরও বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের নির্ধারিত সময় (এক বছর) পূর্ণ হওয়ায় অনেক গ্রাহকই ঋণ পরিশোধ করছে। কারণ, সময়মতো টাকা না দিলে সরকার নির্ধারিত সুদ ভর্তুকি (৪.৫%) থেকে বঞ্চিত হবেন গ্রাহক। তাই আদায়ও কিছুটা বেড়েছে।

ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং (আইসিআরআর) একটি চমৎকার নীতিমালা বলে মনে করেন এ জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার। কারণ গ্রাহকের ব্যালান্সশিট, অডিটেড ব্যালান্সশিট যাচায়-বাছায় করলে ঋণ দেয়া যাবে কি না সেটা বোঝা যায়। সিআরজি নীতিমালার তুলানায় আইসিআরআর অনেকটাই সাইন্টিফিক (বিজ্ঞানসম্মত) বলে মনে করেন তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০