নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সড়ক নিরাপত্তা খাতে ৩৫ দশমিক আট কোটি ডলার (তিন হাজার ৭৮ কোটি টাকা) ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক। রোড সেফটি প্রজেক্টের আওতায় গত সোমবার ওয়াশিংটনে অবস্থিত সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে এ অনুমোদন দেয়া হয়। গতকাল বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার ও নাটোর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার সড়কে প্রাথমিকভাবে বসানো হচ্ছে নম্বর প্লেট শনাক্তকরণ ডিভাইস। এতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে কোনো চালক পার পাবেন না। প্রকল্পটির মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা পরিমাপ, উন্নত নকশা, প্রকৌশল সুবিধা, গতি প্রয়োগ, জরুরি সেবাসহ ব্যাপক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে দুই মহাসড়কে ৩০ শতাংশের বেশি সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা স্থায়ী অক্ষমতার প্রধান কারণ এবং শিশুমৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ। বাংলাদেশের জন্য সড়ক নিরাপত্তা উন্নত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন অগ্রাধিকার। সড়ক নিরাপত্তায় অর্থায়ন করতে পেরে বিশ্বব্যাংক আনন্দিত। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।
প্রকল্পের আওতায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে পাঁচ হাজার কিলোমিটার মহাসড়ক নিরাপদ করা হবে। তথ্যের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার বিবেচনায় বিভিন্ন ইন্টার সেকশনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাত্রার পূর্ত কাজের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। ট্রাফিক পুলিশসহ অন্য সংস্থার ব্যবহারের জন্য স্থাপন করা হবে জাতীয় ডেটা সিস্টেম। জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা ও নাটোর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার মহাসড়কে বসানো হবে সিসিটিভি। স্থাপন করা হবে ইন্টিগ্রেটেড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনসিডেন্ট ডিটেকশন সিস্টেম। কেউ যদি বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালায় এবং কোনো দুর্ঘটনা ঘটায় তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধরা পড়বে।
দেশে মোট সড়ক ২১ হাজার ৫৯৫ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার। জাতীয় মহাসড়ক তিন হাজার ৯০৬ এবং আঞ্চলিক মহাসড়ক চার হাজার ৪৮২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার। ১৩ হাজার ২০৬ দশমিক ৯২৩ কিলোমিটার জেলা সড়ক। এর মধ্যে এক হাজার ৬৭২ কিলোমিটার সড়ক ‘মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এসব সড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বসানো হবে প্রযুক্তি। এতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পার পাবেন না চালকরা। সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে তাই ‘বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প’ হাতে নিচ্ছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), হাইওয়ে পুলিশ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস)।
সমন্বিত নিরাপদ সড়ক প্রণয়নে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সরকার। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় মোট তিন হাজার ৭৮ কোটি টাকা এবং বাকি অর্থ সরকারি খাত থেকে মেটানো হবে।