শহিদ বুদ্ধিজীবী খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা। তিনি যুক্তিবাদী ও প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি শহিদ হন। জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ১৯২০ সালের ১০ জুলাই ময়মনসিংহ শহরের বড়বাসায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়ায়। জ্যোতির্ময় ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। তিনি ১৯৩৬ সালে ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯৩৯ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ এবং এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। একই বছর তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজে যোগদান করেন। ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত এখানে চাকরি করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ষাটের দশকে তিনি উচ্চতর গবেষণার জন্য ফেলোশিপ নিয়ে লন্ডন যান এবং ১৯৬৭ সালে কিংস কলেজ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পরের বছর কর্মস্থলে যোগদান করে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন এবং আমৃত্যু এ বিভাগেই কর্মরত ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষক এবং প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করেন। জ্যোতির্ময় ছিলেন যুক্তিবাদী ও প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী। তিনি ব্যক্তিগত ধ্যান-ধারণায় মানবেন্দ্রনাথ রায়ের র্যাডিক্যাল হিউম্যানিজমে বিশ্বাস করতেন। তিনি সাহিত্য, রাজনীতি ও সমাজ সম্পর্কে ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় অনেক মূল্যবান প্রবন্ধ রচনা করেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল র্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা সেন্টার অব দি ইন্টারন্যাশনাল কুয়াকারস সার্ভিসেস এবং বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসের সদস্য ছিলেন। ১৯৫১ সালে তিনি দেরাদুনে অনুষ্ঠিত অল-ইন্ডিয়া হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সভা এবং ১৯৬৪ সালে হেগে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট অ্যান্ড ইথিক্যাল ইউনিয়নের সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯৮২ সালে তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। জ্যোতির্ময় ছিলেন নানা বিষয়ে উৎসাহী একজন সংস্কৃতিবান মানুষ। দেশের যেকোনো প্রগতিশীল আন্দোলন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তার ঘনিষ্ঠ সংশ্লিষ্টতা ছিল। এ কারণে তিনি সর্বমহলে পরিচিত ছিলেন। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যার সময় তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর দ্বারা গুলিবিদ্ধ ও আহত হন । এরপর চার দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩০ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা