সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: কয়েক বছর ধরে মামলা জটিলতায় বাড়ছে আটক হওয়া জাহাজের সংখ্যা। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার আমদানি পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা দুটি বিদেশি জাহাজ মামলার কারণে আটক হয়। মূলত বাংলাদেশি অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক মামলার কারণে এগুলো আটক হয়েছে। এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় মোট ২৫টি জাহাজ আটক আছে। তবে মামলা ও ব্যবসায়িক জটিলতার মাঝখানে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। এতে ক্ষতি হচ্ছে হাজার কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, মামলা-সংক্রান্ত জটিলতায় কারণে আদালতের নির্দেশনায় গত সপ্তাহে অ্যাডমিরাল মার্শাল কোর্টের নির্দেশে লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ ‘সান আলফেনসো’ এবং মার্শাল আইল্যান্ড পতাকাবাহী জাহাজ ‘সেলসিয়াস নেলসন’ আটক করা হয়। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যেতে পারছে না দুটি জাহাজ। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত মেটি ২৫টি জাহাজ বন্দরসীমায় আটক আছে।
অপরদিকে শিপি এজেন্টরা জানান, মূলত পাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রাজ্জাক জুটের পক্ষ থেকে ১৫ কোটি টাকার পাওনা দাবি করা হয়েছে। এ নিয়ে রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউনের টপিক্যাল শর্মি সেন্টারের প্রতিষ্ঠান রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সঙ্গে লজিস্টিক কোম্পানি বিএস কার্গোর ব্যবসায়িক লেনদেন-সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হয়। এ কারণে রাজ্জাক জুট পাওনা আদায়ে মামলা করে। সেই মামলায় অ্যাডমিরাল কোর্ট বিএস কার্গোর সংশ্লিষ্টতা থাকা অন্য দুটি বিদেশি জাহাজ আটকের নির্দেশ দেয়। এ কারণে লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ ‘সান আলফেনসো’ এবং অন্যটি মার্শাল আইল্যান্ড পতাকাবাহী জাহাজ ‘সেলসিয়াস নেলসন’ চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যেতে পারছে না।
এর মধ্যে ‘সান আলফেনসো’ জাহাজটিতে ১০৪০ টিইইউস কনটেইনার রপ্তানির জন্য তোলা হয়েছিল। কিন্তু মামলার কারণে ওই রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে এখন জাহাজটি বহির্নোঙরে অলস বসে আছে। এখন যতদিন জাহাজটি মামলা জটিলতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না, ততদিন দৈনিক কমপক্ষে ১৫ হাজার ডলার করে ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে জাহাজটিকে। একই সঙ্গে জাহাজে তোলা কনটেইনারভর্তি পণ্যগুলো সময়মতো বিদেশি বায়ারদের কাছে পৌঁছে দেয়ার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল। এতে ক্ষতি হবে কয়েক কোটি টাকা।
অন্যদিকে ‘সেলসিয়াস নেলসন’ জাহাজটি অনুমতি নিয়ে বন্দরে আমদানি পণ্য নামাতে পারলেও কোনো রপ্তানি পণ্য জাহাজে তুলছে না। কারণ জাহাজটিও মামলা জটিলতা থেকে খালাস না পাওয়া পর্যন্ত অলস বসে থাকবে। আর ক্ষতিপূরণ গুনবে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার ডলার।
জানা যায়, মার্শাল আইল্যান্ড পাতাকাবাহী জাহাজ ‘সেলসিয়াস নেলসন’ গত ১৬ মার্চ শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর থেকে ৭৭১ বক্স এবং এক হাজার ৫০ টিইইউস আমদানি কনটেইনার নিয়ে ২২ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে পৌঁছে। সেদিনই মামলা জটিলতায় পড়ে জাহাজটি। পরে বন্দরের অনুমতি নিয়ে ২৩ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-৫ জেটিতে ভিড়ে। জাহাজটি গত শুক্রবার সব আমাদনি কনটেইনার নামিয়ে বহির্নোঙরে অবস্থান করে। জাহাজটিতে ১৩শ রপ্তানি কনটেইনার ওঠার কথা থাকলেও আপাতত সেই জাহাজে আর রপ্তানি কনটেইনার ওঠানো হচ্ছে না।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক ফিডারটেক কোম্পানির এ জাহজের বাংলাদেশি এজেন্ট ক্রাউন নেভিগেশন। প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাহেদ সারোয়ার শেয়ার বিজকে বলেন, গত ২২ তারিখ জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে এবং এরপর পণ্য নিয়ে ২৬ তারিখ চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদালতের গ্রেপ্তার আদেশ থাকায় জাহাজটি এখন বন্দরের বহির্নোঙরে বসে আছে। এতে করে প্রতিদিন ১৫ হাজার ডলরার করে ক্ষতিপূরণ গুনতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বসন্তকালে আদালত বন্ধ থাকায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। যদিও আগামীকাল বসন্তকালে একটা কোর্ট চালু থাকবে, আমাদের আইনজীবী যাবে। আর বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাহাজটি আটকে থাকবে। মূলত বিএস কার্গোর সাথে এক জুট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের পণ্য নিয়ে জটিলতা ছিল, যা আমরা আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর জানতে পারি।
অন্যদিকে লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ ‘সান আলফেনসো’ কলম্বো পোর্ট থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে এসে চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস করে। ২২ মার্চের মধ্যে ওই জাহাজে এক হাজার ৪০ টিইইউস রপ্তানি কনটেইনারও তোলা হয়। আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার পর জাহাজটি আটক করা হয়। বর্তমানে রপ্তানি কনটেইনার বোঝাই করেই জাহাজটি বহির্নোঙরে অপেক্ষা করছে। ট্রান্স ওয়ার্ল্ড ফিডার্সের জাহাজটির দেশীয় এজেন্ট কর্ণফুলী গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলেন, জাহাজ আটকের কারণে বিপুল রপ্তানি পণ্য আটকে গেছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দর কোনো জাহাজ আটক করে না, আদালতের একজন মার্শাল নিয়োগ দেয়। তিনিই জাহাজ আটক করেন। আর আদালতের নির্দেশনার যতদিন থাকবে, ততদিন বন্দরের জলসীমা ত্যাগের ছাড়পত্র দেয়া হয় না।