কারসাজির আশঙ্কা: নোটিসের পরও টানা বাড়ছে কে অ্যান্ড কিউর শেয়ারদর

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: লোকসানের বৃত্ত থেকে বের হতে না পারলেও টানা বাড়ছে কে অ্যান্ড কিউর শেয়ারদর। অস্বাভাবিকভাবে দর বাড়ার কারণ জানতে কোম্পানিটিকে একাধিকবার নোটিস দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তবুও টানা বাড়ছে শেয়ারদর, এ কারণে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজির আশঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারীরা।

তথ্যমতে, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ৬৫ টাকা ৭০ পয়সা বেচাকেনা হয়েছে। এ দিন কোম্পানির শেয়ারদর আগের দিনের চেয়ে এক টাকা ৩০ পয়সা পরিবর্তন হয়েছে। গত ২০ জুন কোম্পানির শেয়ার ৫৬ টাকা ৩০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। এরপর থেকে টানা পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানির শেয়ারদর ৯ টাকা ৪০ পয়সা বা প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে গত ৫ জুন থেকে কোম্পানির শেয়ারদর টানা বাড়তে শুরু করে। ওই দিন কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ৫২ টাকা ১০ পয়সা। গত ছয় মাসে কোম্পানির শেয়ারদর ৩১ টাকা ৭০ পয়সা বা ৯৩ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের শুরুতে প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানির শেয়ার ৩৪ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।

এদিকে, ডিএসইর নোটিসের জবাবে কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দর বাড়ার কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। গত ছয় মাসে কোম্পানিটিকে দুইবার ডিএসইর পক্ষ থেকে দর বাড়ার কারণ জানতে নোটিস দেয়। তবুও টানা দর বাড়ায় কোম্পানিটির শেয়ারে কোনো চক্র জড়িত থাকার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, কোনো কোম্পানির ইতিবাচক কোনো খবরে ওই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরে প্রভাব পড়ে। কখনও কখনও টানা বাড়ে শেয়ারদর। আর যখন কোনো ইতিবাচক খবর থাকে না তাতে দর কিছুটা বাড়তে পারে। তবে লোকসানি কোনো কোম্পানির দর টানা বাড়ার কোনো তথ্য যখন কোম্পানির নিকট না থাকে তখন সেই শেয়ারে কোনো চক্র জড়িয়ে পড়তে পারে। এ চক্রটি সুযোগ বুঝে স্বল্প মূলধনি, শেয়ার সংখ্যা কম এবং লোকসানি কোনো কোম্পানিকে টার্গেট করেই কাজ করে। যখন দর বাড়তে থাকে তখন কিছু সাধারণ বিনিয়োগকারী এসব শেয়ার কেনে। ঠিক তখনই চক্রটি সুযোগ বুঝে নিজেদের হাতে থাকা শেয়ার ছেড়ে দিয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়ে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সচেতনতার পাশাপাশি দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করতে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তারা। তা ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এসব কোম্পানির দর কেন বাড়ছে, কারা এসব দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করছে তা খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন তারা।

এ সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, দুর্বল কিছু কোম্পানির শেয়ার দর হঠাৎ বাড়ছে। এসব কোম্পানির শেয়ারের লেনদেনে তথ্য দেখলেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বুঝতে পারবে কারা এর সঙ্গে জড়িত। তবে এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ হাউজে ট্রেড করেন পলাশ। তিনি বলেন, গত এক মাসে বেশ কিছু লোকসানি কোম্পানির দর ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমান বাজারে লোকসানি ও দুর্বল কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ায় বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে রয়েছে। এর আগে এসব কোম্পানির শেয়ারে লোকসান দিয়েছি। আমার জানামতে অনেকেই লোকসানে পড়ে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত আছে। তবে এসব কোম্পানিতে নতুন বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত কারা এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করে দর বাড়াচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া। তাহলেই বাজারে স্বচ্ছতা ফিরে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন লোকসানে ছিল তালিকাভুক্ত কোম্পানি কে অ্যান্ড কিউ। এরপর গত বছর কোম্পানিটি উৎপাদন বন্ধ থাকার কথাও ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি সিএনজি স্টেশনটিও বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে একটি প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানির কারখানার জমি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। আর এ ভাড়ার অর্থই এখন আয়ের প্রধান উৎস। অপরদিকে কোম্পানিটি লোকসানের কবলে পড়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

লভ্যাংশের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০০৭ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। তাছাড়া ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিন বছর ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। ২০১০ সালের পর থেকে কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেয়ার ইতিহাস নেই কোম্পানিটির। এদিকে কোম্পানিটির পুঁঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে ১৯৯৬ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন চার কোটি ৯০ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ৪৯ লাখ দুই হাজার ৫৩০ টি। এর মধ্যে পরিচালকদের কাছে ২৪ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে তিন দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭২ দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০