নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজারে হঠাৎ বাড়ছে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারদর। বার বার নোটিস দিয়েও কোনো কাজে আসছে না। কারসাজিচক্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলো। অতীতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলো একটি অসৎ চক্রের টার্গেটে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারসংখ্যা কম। এ কারণে এসব কোম্পানিতে অল্প বিনিয়োগ করেই শেয়ারদর ওঠানামা করানো যায়। ফলে এসব কোম্পানিকে নিয়েই মেতে ওঠে অসৎ চক্র। অপরদিকে যেসব কোম্পানির মূলধন বেশি, সেগুলোর শেয়ারসংখ্যাও অনেক। ফলে সেগুলোর শেয়ার নিয়ে কারসাজি করাটা বেশ জটিল। আর এ কারণেই স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোকেও তারা বেশি টার্গেট করে খেলায় মেতে ওঠে বলে মনে করছেন তারা।
তথ্যমতে, গত বছরের শেষ দিকে বাজার স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করে। তখন লোকসানে থাকা স্বল্প মূলধনি ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির কিছু কোম্পানির দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। সে সময় স্বল্প মূলধনি লোকসানি সাতটি কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ওই কোম্পানিগুলোর মধ্যে আছেÑরহিমা ফুড করপোরেশন, ফাইন ফুডস, বিডি অটোকারস, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, জিলবাংলা সুগার মিলস, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ এবং শ্যামপুর সুগার মিলস। কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলেও অদ্যাবধি তা প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি কারা এসব কোম্পানির অস্বাভাবিক দর বাড়ানোর সঙ্গে জড়িত, তাদের কোনো শাস্তি হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের শেষ দিকে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ধারায় গতিশীল হলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে বাজার মন্দার দিকে ধাবিত হয়। এতে লেনদেন ও সূচকে মন্দাভাব অব্যাহত থাকে। বাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ কম, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর ডে ট্রেডারের ভূমিকা পালন করায় এমনটি হচ্ছে। তাছাড়া ভালো শেয়ারেরও অভাব রয়েছে। বর্তমান বাজারে লোকসানি, স্বল্প মূলধনি, উৎপাদন বন্ধ এমন কোম্পানির শেয়ারদর লাফিলে লাফিয়ে বাড়ছে। অস্বাভাবিকভাবে শেয়ারদর বাড়ার কারণে অনেক সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থা তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখে না। এতে যে চক্রটি স্বল্প মূলধনি কোম্পানির দর বাড়ানোর পেছনে কাজ করে, তারা উৎসাহিত হয়। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারী। এসব বিষয়ে বহু আলোচনা-সমালোচনা হলেও কোনো কিছুই কাজে আসছে না বলে মনে করছেন তারা।
অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ার না থাকায় মাঝেমধ্যে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির দর বাড়ছে। এটি পেছনে কোনো চক্র জড়িত থাকতে পারে। মাঝেমধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তদন্ত করে। কিন্তু কেউ বিচারের বা শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছে না। এতে বার বার উৎসাহিত হচ্ছে চক্রটি। যদি এসব কোম্পানিকে ডিলিস্টেড করে দেওয়া যেত, তাহলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতেন বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউজের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, স্বল্প মূলধনির কোম্পানিগুলোতে হয়তো কেউ পজিশন নিচ্ছে, এ কারণে দর বেড়ে যাচ্ছে। তবে কারা পজিশন নিচ্ছে সেটা জানা যাচ্ছে না। এসব শেয়ারদর যেমনিভাবে বাড়ছে, ঠিক তেমনি পড়ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকেই। তবে আমরা বার বার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলে আসছি, আপনারা ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করুন। প্রলুব্ধ হয়ে যদি কেউ এসব শেয়ার কেনেন, তাহলে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এদিকে অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণে চলতি বছরের ১৭ মে তুংহাই নিটিং, রিজেন্ট টেক্সটাইল, কে অ্যান্ড কিউ ও জুট স্পিনার্সের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। চলতি মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে নোটিস দিয়েছে ডিএসই। এর মধ্যে কোনো কোনো কোম্পানিকে একাধিকবারও নোটিস দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলো হলোÑবিচ হ্যাচারি, রহিমা ফুড, শাইনপুকুর সিরামিকস, সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ, সাভার রিফ্র্যাকটরিজ, কে অ্যান্ড কিউ (বাংলাদেশ) লিমিটেড, আজিজ পাইপস ও বিডি ওয়েলডিং ইলেকট্রোডেস লিমিটেড। এ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ বাদে সবগুলোই লোকসানি। তবে প্রতিটি নোটিসের জবাবে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছেÑঅস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। অথচ দর বাড়ছেই।
Add Comment