সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: কুমিল্লা ইপিজেডের তৈরি পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান মেসার্স বারিধি গার্মেন্টস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে নিবন্ধিত। প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে আমদানিকৃত পণ্য অবৈধ মজুত ও অবৈধ অপসারণ করেছে। এতে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে ৮৯ কোটি চার লাখ ২২ হাজার ৫০৫ টাকা। যা আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দাবিনাম সংবলিত কারণ দর্শানো নোটিস জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট।
সূত্রে জানায়, কুমিল্লা ইপিজেডের মেসার্স বারিধি গার্মেন্টস লিমিটেড ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটে নিবন্ধন পায়। ফলে প্রতিষ্ঠানটি বন্ড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সি হিসেবে লাইসেন্সিং রুলসের আওতায় যাবতীয় আমদানি রপ্তানি ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের কাছে দায়বদ্ধ। তাই নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক নিরক্ষণের জন্য একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। ওই কমিটি ২০১৬ সালে ১ জনু থেকে ২০২১ সালের ৩১ মে পর্যন্ত সময়ের নিরক্ষণ সম্পাদনের জন্য গত ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
এ সময় নিরীক্ষায় দেখা যায়, ২০২০ সালের ১ জুন থেকে ২০২১ সালের ৩১ মে পর্যন্ত এবং ২০২০ সালের ১ জুন থেকে ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পণ্যে ব্যবহƒত এক্সেসরিজ মজুত থাকার কথা সে তুলনায় সাত লাখ ৩৪ হাজার ৮৬৪ কেজি এক্সেসরিজ কম পাওয়া যায়। এতে বোঝা যায়, প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্য অবৈধভাবে অপসারণ করেছে। যার শুল্কায়ন মূল্য ৪৬ কোটি ৪৯ লাখ ৫১ হাজার ৩৯৩ টাকা। যার বিপরীতে ১২৭ দশমিক ৭২ শতাংশ হারে সরকারি রাজস্ব আসে ৫৯ কোটি ৩৮ লাখ ৩৫ হাজার ৯১৯ টাকা। ফলে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সিং বিধিমালা শর্তাবলি সুস্পষ্ট লংঘন হওয়ার প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ফাঁকিকৃত রাজস্ব আদায়ের জন্য কারণ দর্শানো নোটিস জারি করে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট।
একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত ফেব্রিক্স অবৈধ মজুতের জন্য অন্য একটি পত্রে কারণ দর্শানো নোটিস জারি করে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট। তাতে ২৯ কোটি ৬৫ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮৬ টাকার রাজস্ব ফাঁকির দাবি করা হয়।
ওই নোটিসে বলা হয়, ২০২০ সালের ১ জুন থেকে ২০২১ সালের ৩১ মে পর্যন্ত এবং ২০২০ সালের ১ জুন থেকে ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পণ্যে ব্যবহƒত ফেব্রিক্স বাদ দিয়ে যে পরিমাণ ফেব্রিক্স থাকার কথা সে তুলনায় ফেব্রিক্সের পরিমাণ তিন লাখ ৮২ হাজার ৪০৯ কেজি বেশি পাওয়া যায়। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি অতিরিক্ত ফেব্রিক্স অবৈধভাবে মজুত
করেছে। যা পরে অবৈধ অপসারণের সম্ভাবনা রয়েছে। অবৈধভাবে মজুতকৃত তিন লাখ ৮২ হাজার ৪০৯ কেজি ফেব্রিক্সের শুল্কায়ন মূল্য ৩৩ কোটি ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৪৭০ টাকা। যার বিপরীতে ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ হারে সরকারি রাজস্ব আসে ২৯ কোটি ৬৫ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮৬ টাকা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনার এ কে এম মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, মেসার্স বারিধি গার্মেন্টস লিমিটেড বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সিং বিধিমালা এবং লাইসেন্সি কর্তৃক পালনীয় শর্তাবলির শর্ত সুস্পষ্ট লংঘন করেছে। যা কাস্টম আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক অপরাধ, একই সঙ্গে লাইসেন্স বাতিলযোগ্য। তাই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সরকারি রাজস্ব আদায়ের জন্য কারণ দর্শানো নোটিস জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে নোটিসে বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি এ বিষয়ে ব্যক্তিগত শুনানি চাইলে লিখিত জবাবে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো জবাব পাওয়া না গেলে সরকারি রাজস্ব সংরক্ষণ ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে নথিপত্র যাচাই করে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মামলাটি নিষ্পত্তির চূড়ান্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে মেসার্স বারিধি গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরন আলীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করে এসএমএস পাঠিয়ে জানান, ‘আমি এই মূহর্তে দেশের বাহিরে আছি, তাই আপনার সাথে কথা বলতে পারছি না।’