এবারও গরমে রোজা পড়েছে। তাই রোজা রেখে যেন পানিশূন্যতা ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকা চাই। দীর্ঘমেয়াদি ও ক্রনিক রোগে আক্রান্ত, বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বারা বেশি সতর্ক থাকবেন। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা ওষুধ বন্ধ করবেন না বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেবেন না। মাঝেমধ্যে রক্তচাপ মেপে দেখুন। ওলটপালট হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ডাইইউরেটিকস-জাতীয় ওষুধ যারা সেবন করেন, তাদের পানিশূন্যতা হতে পারে বেশি। ইফতারে অতিরিক্ত লবণ দেয়া খাবার, সয়া সস, টেস্টিং সল্ট দিয়ে তৈরি খাবার, মেরিনেটেড কিংবা প্রক্রিয়াজাত খাবার রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ ও হƒদ্রোগীরা ছোলা, ফলমূল বা সালাদের সঙ্গে কাঁচা লবণ পরিহার করবেন। তাই ইফতারে এসব যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। তাজা ফলমূল খেতে চেষ্টা করুন।
কিডনি রোগীরা রোজা করতে চাইলে অবশ্যই নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। কারণ পানিশূন্যতায় ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যেতে পারে। তাদের সাধারণত সারাদিনে পানির পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। অনেকেই শরীরের পানি কমানোর ওষুধ সেবন করেন, যা রোজায় শরীরকে আরও পানিশূন্য করে দিতে পারে। এ সময় ডাল, ছোলা ও বেসনের তৈরি খাবার বেশি খাওয়া হয়, যা কিডনি রোগীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ডায়াবেটিসের রোগীরা অবশ্যই নিজের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। ইনসুলিন ও ওষুধের নতুন সময়সূচি এবং মাত্রা জেনে নেবেন। রোজা রেখে গ্লুকোমিটারে রক্তের শর্করা পরীক্ষা করলে রোজা ভাঙে না, এটা আলেম-ওলামাদেরই বক্তব্য। তাই রোজায়ও প্রয়োজন মনে করলেই নিজের রক্তের শর্করা পরীক্ষা করবেন। শর্করা ৪-এর নিচে বা ১৬ দশমিক ৬-এর ওপর চলে গেলে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। এ ছাড়া দিনের যেকোনো সময় বুক ধড়ফড়, ঘাম, অস্থিরতা, কাঁপুনি, মাথা ঘোরা ও ঝাপসা দেখার মতো উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে রোজা ভাঙতে হবে। এগুলো রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার লক্ষণ। ডায়াবেটিসের রোগীরা চিনিযুক্ত পানীয় খাবেন না। তবে জটিল শর্করা খেতে হবে, বিশেষ করে সাহ্রির সময়। অবশ্যই সাহ্রি খেতে হবে। পানিশূন্যতা যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত যথেষ্ট পানি ও তরল পান করতে হবে। সপ্তাহে দুই-তিন দিন, ইফতারের আগে ও ইফতারের দুই ঘণ্টা পর, কখনও সাহ্রির আগে রক্তে শর্করা পরীক্ষা করবেন এবং সে অনুযায়ী ইনসুলিন ও ওষুধের মাত্রা ঠিক করবেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। (বাকি অংশ আগামীকাল)
অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক