নিজস্ব প্রতিবেদক: গত আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে মার্চে। এ মাসে ১৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। স্থানায় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৫ হাজার ৯৯৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা (১ ডলার=৮৬ টাকা)। তবে প্রবাসী আয়ের এই পরিমাণ গত বছর (২০২১) মার্চের তুলনায় পাঁচ কোটি ডলার কম।
প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর কভিড-১৯-এর কারণে প্রবাসীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছেন। কেউ চাকরি হারিয়ে কিংবা ব্যবসা বন্ধ করে সব অর্থ পাঠিয়ে দেশে ফিরেছেন। এছাড়া ওই সময় অবৈধ চ্যানেলগুলোও বন্ধ ছিল। তাই বাধ্য হয়ে সবাই ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠিয়েছেন। ফলে গত বছর মাঝামাঝি পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশি ছিল। এখন ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হয়েছে। শিক্ষা, চিকিৎসা ও ভ্রমণসহ বহির্বিশ্বের সঙ্গে যাতায়াত বাড়ছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া সব টাকা না পাঠিয়ে অনেকে আবার জমাতে শুরু করেছেন। আবার সশরীরে যাওয়া-আসা শুরু হওয়ায় অনেকে বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন। এসব কারণে চলতি অর্থবছরে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, রেমিট্যান্স সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জনে নগদ প্রণোদনা দুই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। প্রণোদনা দেয়ার আগে বৈধ পথে মাত্র ৪৯ শতাংশ রেমিট্যান্স দেশে আসত। আমরা চেষ্টা করছি, প্রবাসীরা যত টাকা আয় করেন, তার পুরোটাই যেন বৈধ পথে আসে।
রেমিট্যান্স আহরণের হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রেমিট্যান্সে এসেছে এক হাজার ৫২৯ কোটি ডলার। বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স বাড়াতে নগদ সহায়তার আওতা বাড়িয়েছে সরকার। এখন থেকে বিদেশি সংস্থায় কাজ করেছেন এমন ব্যক্তিদের ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত পেনশন ফান্ড, প্রভিডেন্ট ফান্ড, লিভ সেলারি, বোনাস ও অন্যান্য গ্র্যাচুইটি এবং অবসর সুবিধার অর্থ দেশে আসলে রেমিট্যান্সের সঙ্গে আড়াই শতাংশ নগদ সহায়তা পাবেন।
তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার, আগস্টে ১৮১ কোটি, সেপ্টেম্বরে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ, অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ, নভেম্বর ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ, ডিসেম্বরে ১৬৩ কোটি, জানুয়ারিতে ১৭০ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ও সবশেষ মার্চে ১৮৬ কোটি মার্কিন ডলার।
২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন ছিল। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। ওই অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে সাত মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসে।
এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। তার আগের বছর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার।
এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার।