বাজেট প্রণয়নে গণমানুষের প্রয়োজন গুরুত্ব পাক

শনিবার আইসিএবি-ইআরএফ আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনীতি: ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রত্যাশা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনায় পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, বাজেট বরাদ্দে প্রয়োজনীয়তার চেয়ে রাজনীতি গুরুত্ব পায় বেশি। এ বরাদ্দ দিতে গিয়ে সরকার এক ধরনের ‘ঠেকা’র মধ্যে পড়ে। কায়েমি স্বার্থ বরাদ্দ বিভাজনকে প্রভাবিত করে। বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা গণতান্ত্রিক সমাজে থাকা উচিত নয়। হঠাৎ করে এ বেড়াজাল ভাঙা সহজও নয়।

আমাদের জাতীয় বাজেটে গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন নেই, এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শেষ পর্যন্ত গতানুগতিক বাজেটই প্রণীত হয়। মন্ত্রীর বক্তব্যেও একই দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে, মানুষের জন্য রাজনীতি, রাজনীতির জন্য মানুষ নয়।

প্রতি বছরই বাজেট ঘোষণার পর সরকারি দলের সংসদ সদস্য ও নেতারা বাজেটকে সময়োপযোগী, বাস্তবসম্মত ও শতভাগ বাস্তবায়নযোগ্য বলে আখ্যা দেন। প্রকৃতপক্ষে বাজেট বরাদ্দে প্রয়োজনীয়তার চেয়ে রাজনীতি গুরুত্ব পাওয়ায় রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় হয়। যেমন, সেতুর প্রয়োজন নেই, অথচ শতকোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার কোনো স্থানে সেতু না থাকায় বছরের পর বছর স্থানীয় জনগণ নিদারুণ ভোগান্তি পোহাচ্ছে। নেতারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, কিন্তু সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে নাÑএমন দৃষ্টান্তও রয়েছে।

বাজেটকে গণমুখী করতে বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য হতে হবে এবং তাতে গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে। শুধু মধ্যম আয়ের দেশে কিংবা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করা নয়, সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণ মানুষ সুফল না পেলে উচ্চ প্রবৃদ্ধি মাথাপিছু নিছক সংখ্যায় পরিণত হবে। নৈরাজ্যসহ নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে দেশ ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি দেশে দরিদ্র মানুষও বাড়ছে। বেশিসংখ্যক দরিদ্র মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আনলে দারিদ্র্য কমবে এবং কম দেখানো যাবে, কিন্তু তা স্থায়ী সমাধান নয়। মানুষ যেন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে, সে লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

আমাদের মন্ত্রণালয়গুলো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে বরাবরই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে ঘোষিত বাজেটে উন্নয়ন খাতে টাকা বরাদ্দ করা হয়, বড় অংশই অব্যয়িত থেকে যায়। বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তোলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারলে বাজেট প্রণয়ন করার কী প্রয়োজন?

কোনো প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা তদারকির দায়িত্ব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি)। অথচ এ বিভাগটিও নিজেদের প্রকল্পের অর্থ যথাসময়ে ব্যয় করতে পারে না। একই অভিযোগ রয়েছে দুর্র্নীতি প্রতিরোধকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থা দুদকের বিরুদ্ধেও। তাই বাজেট প্রণয়ন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, বাজেট যথাসময়ে বাস্তবায়নও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে বাজেট প্রণয়নই বেশি গুরুত্ব পায়, যথাসময়ে বাস্তবায়ন নয়। ফলে বাজেট থেকে প্রত্যাশিত ফল মেলে না। এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবায়নে মনোযোগ বাড়াতে হবে। তবেই সুফল পাবে সাধারণ মানুষ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০