পাহাড়ি ঢলের বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নিন

প্রতি বছরই দেশের চর এলাকা বন্যায় আক্রান্ত হয়। চর এলাকার ভূপ্রাকৃতিক অবস্থান এবং বিশ্বের জলবায়ুর পরিবর্তন, উভয়ই বন্যার মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা এবং এগুলোর প্রায় ৫০০ শাখা-প্রশাখা দিয়ে পানির সঙ্গে প্রতি বছর প্রায় ২৫০ কোটি টন মাটিকণা প্রবাহিত হয়। নিয়মিত এ পলি ড্রেজিং করা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ, যার সংকুলান করা আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন। পলিকণা বালুকণার চেয়ে ছোট ও হালকা, কিন্তু কাদাকণার চেয়ে বড় ও ভারী বলে দেশের মধ্য অঞ্চলের চরে জমা হয়। ফলে চরের পানির ধারণক্ষমতা কম হয়।

ভূপ্রাকৃতিক কারণেই প্রতি বছর চরে বন্যা দেখা দেয়। পলিমাটি আমাদের কৃষকদের ফসল উৎপাদনে বড় সহায়ক, সন্দেহ নেই; কিন্তু বন্যার ব্যাপকতা কিংবা অসময়ে বন্যায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। কখনও বন্যার সময় ও এর মাত্রা নির্ভর করে হিমালয়ে বৃষ্টির সময় ও পরিমাণের ওপর; কখনও নদী দখলের কারণে স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘিœত হওয়ায় অকাল বন্যা দেখা দেয়।

চর এলাকায় প্রতি বছর বন্যা হবে, এটাই স্বাভাবিক। বলা যায়, এটা চরের কৃষকের জীবনের অংশবিশেষ। কিন্তু বন্যার মাত্রা বেশি হলে কিংবা এর স্থায়িত্ব দীর্ঘ হলে কৃষককে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বন্যা স্থায়ীভাবে প্রতিরোধ করা হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু পরিকল্পিত উপায়ে নদীশাসন, খনন ও নদী দখল বন্ধ করা গেলে ক্ষতির তীব্রতা ও পরিমাণ কমবে।

গতকাল শেয়ার বিজে ‘ইটনায় পাহাড়ি ঢলে ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষতি কমাতে ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামতের জন্য মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে মেরামত শুরু করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামত করছেন। কিন্তু তাদের ফসলও ঘরে তুলতে হবে। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে এগিয়ে আসতে হবে। সংরক্ষণাগার না থাকায় বন্যায় ফসলের বীজ নষ্ট হয়ে যায়। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর গবাদিপশুর রোগবালাই বেড়ে যায়। পশুর রোগবালাই থেকে রক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।

অনেক সময়ই সরকারের কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা দুর্গম চরে কাজ করতে আগ্রহী হন না। ফলে কৃষক পরামর্শও যথাসময়ে পান না। এটি নিশ্চিত করতে হবে। কোন বছর কোন চরের কৃষক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তা আগাম বলা যায় না। যেহেতু চর এলাকায় প্রায় বছরই বন্যা হয়, তাই চরের কৃষি ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ কৃষি প্রকল্প নেয়া উচিত।

মনে রাখতে হবে, নদীতীরের মানুষজন প্রান্তিক পর্যায়ের। তারা কষ্টে-সৃষ্টে কোনো রকমে জীবনযাপন করেন। বন্যা-ভাঙনে তারা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই সহায়তা প্রাপ্তিতে বিলম্বে তাদের দুর্দশা আরও বাড়বে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ-সার ও কৃষি উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। সাময়িক সহায়তা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষও দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনার স্থায়ী সমাধান চান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০