রোজায় মুসলিমদের খাদ্যাভ্যাস ও খাওয়ার সময়সূচিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। ডায়াবেটিস রোগীদের যেহেতু একটি সুনিয়ন্ত্রিত ও সঠিক সময়সূচির খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হয়, তাই তাদের এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। অবশ্য কিছু জটিল রোগী ছাড়া বেশির ভাগ ডায়াবেটিস রোগী বড় কোনো সমস্যা ছাড়াই রোজা রেখে থাকেন।
এবার অতিরিক্ত গরমে অধিক ঘামের কারণে এমনিতেই পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তার সঙ্গে যদি রোজা রেখে দিনের বেলা কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করা হয়, তাহলে এই ঝুঁঁকি আরও বেড়ে যায়। তা ছাড়া ব্যায়ামের সময় আমাদের শরীরে সঞ্চিত শর্করা খরচ হয়। কাজেই রোজায় দিনের বেলা অতিরিক্ত কায়িক শ্রমে শরীরের শর্করার মাত্রা কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া দেখা দিতে পারে। তাই যে ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত হাঁটেন বা ব্যায়াম করেন, রোজায় তাদের নিয়মে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে।
রোজা রেখে দিনের বেলা বেশি ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম না করাই ভালো। ইফতার বা রাতের খাবারের এক ঘণ্টা পর হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করতে পারেন বা হাঁটতে পারেন। সাহরির আগেও হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করতে পারেন। রোজাদার ডায়াবেটিস রোগীরা তারাবির নামাজ পুরো ২০ রাকাত পরলে তা ব্যায়ামের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। তাই রোজায় অতিরিক্ত ব্যায়াম না করলেও চলে।
এদিকে কভিড মহামারির সময় সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বাড়ির বাইরে বের হওয়া নিরাপদ নয়। নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন:
বাসার বারান্দায় অথবা ছাদে ইফতারের পর অথবা সাহরির আগে হাঁটুন। সম্ভব হলে বাসায় ট্রেডমিল বা সাইক্লিং মেশিনে ব্যায়াম করতে পারেন। বাড়িতে টেবিল টেনিস বা এ-জাতীয় ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা থাকলে তা খেলতে পারেন। তরুণেরা অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে দড়িলাফ দিতে পারেন। পানিশূন্যতা দূর করতে ইফতারের পর থেকে সাহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। রোজা রাখা অবস্থায় দুর্বল লাগলে, মাথা ঝিমঝিম, চোখে ঝাপসা, অতিরিক্ত ঘাম, হাত-পা কাঁপা অনুভব করলে সঙ্গে সঙ্গে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করতে হবে।
রক্তে গ্লকোজের মাত্রা ৩ দশমিক ৯ মিলিমোল বা এর কম কিংবা ১৬ দশমিক ৬ মিলিমোল বা এর বেশি হলে রোজা ভেঙে ফেলা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা পুনর্নির্ধারণ করে নিন।
ডা. এ হাসনাত শাহীন
কনসালট্যান্ট, ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগ
ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা