ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ ১১ হাজার কোটি টাকা

শেখ আবু তালেব: প্রয়োজনের সময় দ্রুত অর্থ সংগ্রহের উৎস ব্যাংক খাত। জাতীয় বাজেট প্রণয়নের সময় এজন্য প্রতি বছর ব্যাংকঋণের একটি সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। বাজেট বিশেষ করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে সরকারকে ঋণমুখী হতে হয়। সরকার চলতি অর্থবছরের গত সাড়ে আট মাসে (জুলাই ২০২১-মার্চ ২০২২) ১১ হাজার ১৬০ কোটি টাকার বেশি নিট ঋণ নিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) জাতীয় বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত নিট ঋণ নিয়েছে ১১ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকায়।

চলতি অর্থবছরের এ সময় সরকার ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ দুটিই করেছে। গ্রহণ ও পরিশোধের পর নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এটি। গত অর্থবছরের আলোচিত সময়ে সরকারের ঋণ নেয়া এর চেয়ে বেশি ছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরের এ সময় সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।

ঋণের পরিমাণ কম হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা বলছেন, করোনার প্রভাব কমতে থাকায় অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। এতে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি সেভাবে বাড়েনি। ফলে সরকারের অর্থের চাহিদাও এখনও শুরু হয়নি আগের মতো। সরকারের অর্থের চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম। মূলত অগ্রাধিকার থাকায় মেগা প্রকল্পগুলোয় বরাদ্দ হওয়া অর্থের ছাড়করণ চলছে। এতে সামগ্রিকভাবে সরকারের ঋণচাহিদা এখনও সেভাবে তৈরি হয়নি। কিন্তু সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে।

এ-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক প্রতিবেদন বলছে, কভিড-১৯ পরিস্থিতি এখন ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ফিরতে শুরু করেছে। সরকারের অর্থ খরচের পরিমাণও বাড়ছে। এর প্রভাবে বেসরকারি খাতেও ঋণ চাহিদা বাড়ছে।

দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ ও প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রয়োজনে সরকার দেশের পাশাপাশি বিদেশি উৎস থেকেও ঋণ সংগ্রহ করে। দেশি-বিদেশি পুঞ্জীভূত এসব ঋণের বিপরীতে প্রতি বছর সুদ পরিশোধ করতে হয় সরকারকে। গত অর্থবছরের বাজেটে একক খাত হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়ের খাত ছিল সুদ পরিশোধ বাবদ। এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৩ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের

বাজেটেও গত বছরের চেয়ে পাঁচ হাজার ১০ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এবার সরকারকে ৬৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ হিসাবে গড়ে প্রতি মাসে পৌনে ছয় হাজার কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে সরকারকে। ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নতুন নেয়া ঋণের বেশিরভাগ পরিশোধ হয় সুদ ব্যয়ে।

তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত সরকারের ব্যাংকঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকায়। ঋণ নিতে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংককে উৎস হিসেবে ধরা হয়। আগে সরাসরি ঋণ নেয়ায় অভ্যস্ত ছিল সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ব্যবহার করে ঋণ নেয়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে।

কভিড-১৯-এর কারণে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণ চাহিদা কম ছিল। এ সময়ে অতিরিক্ত তারল্য দুই থেকে তিন শতাংশ কাটঅফ রেটে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকগুলো। নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে এ খাতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন ব্যাংকাররা। আবার সরকারও দীর্ঘমেয়াদি উৎস হিসেবে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ব্যবহার করে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এভাবে ব্যাংকের বিনিয়োগ সরকারের কাছে দীর্ঘ মেয়াদে আটকে যাচ্ছে।

সরকারের বিল ও বন্ড থেকে এত বেশি ঋণ নেয়ার বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনা মহামারির ক্ষত কাটিয়ে উঠছে দেশের অর্থনীতি। এখনও রাজস্ব আদায়ের হার সেভাবে বাড়েনি। সরকারের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ ও বার্ষিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে (এডিপি) অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে। বিশেষ করে মেগা প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এজন্য সরকার অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে। ব্যাংক থেকে যেকোনো পদ্ধতিতেই সহজে ঋণ নেয়া যায় বলেই সরকার এদিকে যাচ্ছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্যাংকগুলোয় তারল্য সরবরাহে কোনো চাপ তৈরি না হয়।’

ব্যাংকগুলোর সরকারের বিল ও বন্ডে বিনিয়োগে আগ্রহের বিষয়ে দেশের বেসরকারি খাতের পিডি (প্রাইমারি ডিলার) ব্যাংকের এক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘বেসরকারি খাতে ঋণ দিলে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার ঋণচাহিদা কম বেসরকারি, কিন্তু আমানতকারীদের ঠিকই সুদ দিতে হবে। এজন্য অপেক্ষাকৃত কম সুদ হলেও সরকারের বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকগুলো।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০