সেহরি খাওয়ার গুরুত্ব ও উপকারিতা

রমজান মাসে সেহরি যথাসম্ভব দেরি করে খাওয়া ভালো। তবে সুবহে সাদিকের আগে রাতের শেষভাগে সেহরি খাওয়া মুস্তাহাব বা পছন্দনীয়। রোজাদার ব্যক্তির যেন সাধ্যাতীত কোনো কষ্ট না হয়, এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) সেহরিকে সুন্নত এবং বিলম্বে  সেহরি গ্রহণ করাকে মুস্তাহাব ঘোষণা করেছেন। সেহরি খাওয়ার আসল সময় সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত যে কয় ঘণ্টা সময়, তার ছয় ভাগের শেষ ষষ্ঠ ভাগ। যদি কেউ এর আগে ভাত খান; কিন্তু চা, পান ইত্যাদি এ ষষ্ঠাংশে করেন, এতেও মুস্তাহাবের সওয়াব পাবেন। যদি শেষরাতে ঘুম না ভাঙে এবং এ জন্য সেহরি খেতে না পারেন, তাহলে সেহরি না খেয়ে রোজা রাখবেন। সেহরি না খাওয়ার কারণে রোজা ছেড়ে দেয়া বড়ই গুনাহের কাজ। যদি নিদ্রা বা অন্য কোনো কারণে কেউ  সেহরি খেতে না পারেন, তাহলে সেহরি না খাওয়ায় তার রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সুবহে সাদিক না হয়, অর্থাৎ পূর্ব দিগন্তে সাদা বর্ণ না দেখা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত সেহরি খাওয়ার নিয়ম আছে। সুবহে সাদিক হয়ে গেলে তারপর আর কিছু খাওয়ার সুযোগ নেই। সেহরি খাওয়ার সময়সীমা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা পানাহার কর, যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কর।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭)

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সেহরি বরকতময়। আল্লাহ তোমাদের যা দান করেছেন, তা তোমরা ত্যাগ করো না।’

সেহরির সময় আরামের ঘুম পরিহার করে জাগ্রত হওয়া আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ ও ইবাদত। এতে শেষ রাতে ওঠার অভ্যাস হয়। কেননা শেষ রাতে আল্লাহর রহমত অবিরাম ধারায় বর্ষিত হতে থাকে। এ সময় আল্লাহর প্রিয় বান্দারা কায়মনোবাক্যে মোনাজাত, নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে লিপ্ত থাকেন। এ সময়টি আল্লাহর পক্ষ থেকে মাগফিরাত বা ক্ষমালাভের সর্বোত্তম সময়। সেহরির সময় জাগ্রত হওয়ার দ্বারা রোজার প্রতি বান্দার আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সেহরির ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত আছে নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা সেহরি গ্রহণকারীদের জন্য দোয়া করে থাকেন। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সেহরি খায়, তার ওপর আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা রহমত বর্ষণ করেন।’ (তাবারানি)

রমজান মাসে রোজাদার ব্যক্তি যদি নিয়মিত সেহরি না খান, তাহলে অত্যন্ত ক্লান্ত-শ্রান্ত-অবসন্ন হয়ে পড়বেন। ফলে পরের দিন রোজা রাখার সাহস হারিয়ে ফেলবেন এবং কাহিল হয়ে পড়তে পারেন। পক্ষান্তরে ওই রোজাদার ব্যক্তি যদি শেষ রাতে পরিমাণমতো সেহরি খেয়ে পুরো দিন না খেয়ে থাকার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন, তবে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে মজবুত থাকেন এবং অতিশয় ক্ষুধায় তেমন কষ্ট পাবেন না। এখানে সেহরি খাওয়ার গুরুত্ব ও উপকারিতা খুঁজে পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) সেহরি ও ইফতারের সীমা নির্ধারণ করে উম্মতের জন্য রোজা পালন সহজ করে দিয়েছেন। তাই রোজাদারদের সময়মতো মাহে রমজানে সেহরি খেয়ে রোজার বরকত ও পুণ্য লাভ করা উচিত।

রোজার নিয়ত

আরবি নিয়ত: নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।

বাংলায় নিয়ত: হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানে আপনার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়ত) করলাম। অতএব আপনি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

ইফতারের আগ মুহূর্তে বেশি ইসতেগফার পড়া

আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহু আল-হাইয়্যুল কাইয়্যুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।

ইফতারের সময় হওয়া বা মাগরিবের আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দোয়া পড়ে ইফতার করা।

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিজক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনারই দেয়া রিজিকের মাধ্যমে ইফতার করছি।

মুহাম্মদ আকিল নবী

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০