চিটাগং এশিয়ান অ্যাপারেলসের রাজস্ব ফাঁকি ৫৬১ কোটি টাকা

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: বিজিএমইএ’র প্রভাবশালী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস ছালামের প্রতিষ্ঠান মেসার্স চিটাগং এশিয়ান অ্যাপারেলস লিমিটেড। নাছিরাবাদ শিল্প এলাকা স্থাপিত এ প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটে নিবন্ধিত। যার সুবাদে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের দেয়া নানামুখী সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। তবে প্রতিষ্ঠানটি সুবিধা ভোগ করলেও তার বিপরীতে ফাঁকি দেয় সরকারি রাজস্ব। ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল, এ তিন বছরে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ফাঁকি দিয়েছে ৫৬১ কোটি ২৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৫৮ টাকা। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দাবিনামাসহ ছয়টি কারণ দর্শানো নোটিস জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট।

জানা যায়, মোহাম্মদ আবদুস ছালামের প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সালের ১৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট থেকে নিবন্ধন পায়। মূলত তারপর থেকে নানা অনিয়ম করে আসছে এ প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি গোয়েন্দা সূত্রে অনিয়ম ও অসঙ্গতির তথ্য পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট প্রতিষ্ঠানটির ১ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পাদন করে। তাতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালে সর্বমোট ২৯টি ইউডি ও মাস্টার এলসির মাধ্যমে সাত কোটি ৮৭ লাখ ৬০ হাজার ২৩৪ ডলারের ফেব্রিকস ও অ্যাকসেসরিজ আমদানি করে। এ আমদানিকৃত কাঁচামাল থেকে পাঁচ কোটি এক লাখ দুই হাজার ৬৩১ ডলার মূল্যের ফেব্রিকস ও অ্যাকসেসরিজ ব্যবহার করে। অবশিষ্ট দুই কোটি ৮৬ লাখ ২৭ হাজার ৬০৩ ডলার মূল্যের ফেব্রিকস ও অ্যাকসেসরিজ প্রতিষ্ঠানটি ইউডিতে উল্লিখিত মাস্টার এলসির বিপরীতে রপ্তানি করেনি। অর্থাৎ এ পণ্যগুলো অবৈধ অপসারণ করেছে প্রতিষ্ঠনটি। যার আমদানি মূল্য ২৩৪ কোটি ৭৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭২ টাকা এবং তাতে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে ২২৭ কোটি ৭০ লাখ ৩৯ হাজার ৫৬৮ টাকা।

একইভাবে ২০১৯ সালে ২১টি ইউডি ও মাস্টার এলসির মাধ্যমে এক লাখ দুই হাজার ৩৩১ মিটার অর্থাৎ চার কোটি এক লাখ ১২ হাজার ১২৩ গজ ফেব্রিকস ও অ্যাকসেসরিজ আমদানি করে। তার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ওই বছর এক কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ২৭৮ গজ ফেব্রিকস ও অ্যাকসেসরিজ ব্যবহার করে ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৮ পিস পোশাক উৎপাদন করে। অবশিষ্ট দুই কোটি এক লাখ ২১ হাজার ৮৪৪ গজ পণ্য অবৈধ অপসারণ করে। যার শুল্কায়নের মূল্য ২৮২ কোটি ৭০ লাখ ২৫ হাজার ৪০৮ টাকা। যার বিপরীতে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি হয় ২৭৯ কোটি ১৯ লাখ সাত হাজার ৩১৪ টাকা।

আর ২০২০ সালে ২৪টি ইউডি ও মাস্টার এলসির মাধ্যমে ছয় কোটি ৬১ লাখ ১৪ হাজার ৯৮৯ ডলার মূল্যের ফেব্রিকস ও অ্যাকসেসরিজ আমদানি করে। এই আমদানিকৃত কাঁচামাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি ছয় কোটি তিন লাখ ২৩ হাজার ৯৬১ ডলারের ফেব্রিকস ও অ্যাকসেসরিজ ব্যবহার করে এবং অবশিষ্ট ৫৭ লাখ ৯১ হাজার ২৮ ডলার মূল্যের ফেব্রিকস ও অ্যাকসেসরিজ অবৈধ অপসারণ করে। যার শুল্কায়ন মূল্য ২৩৪ কোটি ৭৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭২ টাকা এবং এর বিপরীতে জড়িত রাজস্ব ৪৯ কোটি ৩১ লাখ পাঁচ হাজার ৩৬৩ টাকা।

অন্যদিকে অপরিশোধিত মূসক বাবদ প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে ছয় কোটি ৫১ লাখ নয় হাজার ৮৪ টাকা। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১৫৭টি বিবিএলসির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে ক্রয়কৃত কাঁচামালের ওপর প্রযোজ্য মূল্য সংযোজন কর ফাঁকি দিয়েছে দুই কোটি ৭৫ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৮ টাকা। ২০১৯ সালে ১২৯টি বিবিএলসির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে ক্রয়কৃত কাঁচামালের ওপর প্রযোজ্য মূল্য সংযোজন কর ফাঁকি দিয়েছে দুই কোটি ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ৩২ টাকা এবং ২০২০ সালে ১০০টি বিবিএলসির মাধ্যমে একইভাবে প্রতিষ্ঠনটি মূল্য সংযোজন কর ফাঁকি দিয়েছে এক কোটি ৫৮ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৪ টাকা।

এসব সরকারি রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে জানতে মোহাম্মদ আবদুস ছালামের মুঠোফোনে একাধিকরার কল করলেও আবদুস ছালাম ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিদার অপব্যবহার করে বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে; যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, একই সঙ্গে লাইসেন্স বাতিল যোগ্য। তাই বিভিন্ন ইস্যুর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটিকে ছয়টি কারণ দর্শানো নোটিস জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৩০ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দেয়ার জন্য বলা হয়েছে, তবে প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তিগত শুনানি চাইলে লিখিত জবাবে উল্লেখ করার জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো জবাব পাওয়া না গেলে সরকারি রাজস্ব সংরক্ষণ ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে দলিলপত্রের গুণাগুণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিষয়টি নিষ্পত্তির চূড়ান্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০