বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কায় ঝুঁকি বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র-চীনে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রভাব পড়েছে পশ্চিমা বিশ্বসহ পুরো ইউরোপে। ফলে বাড়তে থাকা জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়ছে। এরই মধ্যে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের দাম রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি এবং নতুন করে চীনে ‘লকডাউন’ ঘোষণায় বৈশ্বিক মন্দার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। খবর: আল জাজিরা।

বিশ্ব আরও একটি মন্দা দেখবে কি না, সে বিষয় নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। কভিডের ধকল কাটিয়ে যখন অর্থনীতি গতিশীল হচ্ছে, তখনই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির আকাশে মেঘ পুঞ্জীভূত হওয়ার শঙ্কা দেখছেন কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ। যদিও অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, চলতি বছরে মন্দা ‘তুলনামূলকভাবে’ অসম্ভব।

রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ, মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা, চীনের করোনা নীতি, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি ও যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার বৃদ্ধি ২০২২ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর চাপ বাড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক তারা সিনক্লেয়ার বলেন, মন্দার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা অবিশ্বাস্যভাবে কঠিন, এমনকি ভালো পূর্বাভাসকারীদের জন্যও। এর আগের বার মন্দা শুরু হওয়ার পরই আমরা বুঝতে পারি।

যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। দেশটিতে লাফিয়ে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম। ফলে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশটিতে সংকট তৈরি হওয়ায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ এর প্রভাব বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে, কমে যেতে পারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। কভিড মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতি সংকুচিত হয় চার দশমিক তিন শতাংশ।

গত মাসে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ডুডলি এক মতামতে সতর্ক করে বলেন, ‘একটি মন্দা এখন কার্যত অনিবার্য।’ সাম্প্রতিক সময়ে আরেকটি সতর্কতা সংকেত হলোÑস্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের ওপর নতুন নিয়ম আরোপ, যা বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে।

অর্থনীতিবিদ ক্যাম্পবেল আর হার্ভে বলেন, ফেডের নীতির কারণে মন্দার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। যারা মনে করেন চলমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ফেড ধীর গতিতে এগোচ্ছে, তাদের সঙ্গেও ঐকমত্য পোষণ করেন তিনি। গত মাসে সিএনবিসির এক জরিপে যুক্তরাষ্ট্রের ৮১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ জানান, তারা বিশ্বাস করেন চলতি বছরে মন্দার শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে পশ্চিমা বিশ্ব। রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি নিষিদ্ধ করেছে বাইডেন প্রশাসন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই পথে হাঁটছে। রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক দেশকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে রাশিয়াকে বাদ দেয়া হয়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে জ্বালানিতে প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী সংকট দেখা দিয়েছে। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছুঁয়েছে। নাগরিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে।

অন্যদিকে কভিড মহামারি থামাতে চীনের ‘কঠোর নীতি’ বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। গত সোমবার চীনের বৃহত্তম শহর সাংহাইয়ে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে শহরটির আড়াই কোটি মানুষ কার্যত ‘ঘরবন্দি’ হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় খাবারের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বাণিজ্যিক এ শহরটি লকডাউনে থাকায় সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চীনা অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ কারস্টেন হোলজ বলেন, চীন এ বছরের জন্য যে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তা পূরণ করা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য অর্থনৈতিক যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, তা অনেকাংশেই ইতিবাচক।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এক প্রতিবেদনে জানায়, চলতি বছর এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হতে পারে পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ, আগামী বছরে যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে পাঁচ দশমিক তিন শতাংশে। যদিও এই হার গত বছরের পূর্বাভাসের চেয়ে কম।

এদিকে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে পেরুতে। বিক্ষোভ দমনে এক মাসের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্টিলোর সরকার। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের পর থেকে দেশটিতে বেড়ে গেছে সব পণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম। এরই প্রতিবাদে সপ্তাহব্যাপী শত শত ট্রাক শ্রমিক ও খামার শ্রমিকরা সারাদেশে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০