পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং পবিত্র রমজান

কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ পরিচিত, কিন্তু বাংলাদেশ নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। মাছে-ভাতে বাঙালির নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে হয় বিভিন্ন দেশ থেকে। বছরের প্রায় সময়েই অসাধু সিন্ডিকেট চক্রের মুনাফালোভী মানসিকতার কারণে চড়া মূল্যে পণ্যদ্রব্য কিনতে হয়, যা স্বাভাবিক বাজারদরের চেয়েও দেড় থেকে দুইগুণ বাড়তি মূল্য হয়ে যায়। গত দুই বছরের মধ্যে পেঁয়াজ, আলু ও লবণের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ঘটনার পর এখন সব পণ্যেরই মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে দরিদ্র নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। করোনাকালে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির বিপরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নেই কোনো মাথাব্যথা, দাম কমার বিষয়েও সঠিক কোনো তথ্য নেই কারও কাছে।

সরকারের কাছে মানুষের বহু প্রত্যাশার মধ্যে অন্যতম প্রত্যাশা হলো দ্রব্যমূল্যের স্বাভাবিক মূল্য বজায় রাখা। কিন্তু ভোক্তাদের পাশাপাশি সরকারকেও সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হতে দেখা যায়, যার ফলে বর্ধিত মূল্যে মাসের পর মাস পণ্য বিক্রি করা হলেও সরকার সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে না। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য কৃষকদের প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও দেশের মানুষের পূর্ণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করার মতো খাদ্যসামগ্রী উৎপাদনের বিষয়ে আশানুরূপ কোনো কার্যক্রম লক্ষ করা যায় না। অথচ দেশব্যাপী লাখ লাখ বিঘা জমি পড়ে থাকে চাষহীন অবস্থায়। কৃষকরাও উৎপাদিত পণ্যের আশানুরূপ মূল্য না পেয়ে কৃষিকাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, যার কারণে কৃষিপ্রধান দেশ হলেও বিদেশনির্ভর হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ফলে বাজারে অস্থিরতা চলাকালেই পবিত্র মাহে রমজানের আগমন ঘটেছে। রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের মূল্য কিছুটা হলেও কমবে, আমরা এমন ধারণা করলেও আমাদের আশাভঙ্গ হয়েছে। রমজান আগমনের পরও কোনো পণ্যের দাম কমেনি, বরং কোনো কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ইফতার তৈরির আইটেমগুলোর দাম আগের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা রমজান মাসে স্বাভাবিক মূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার স্বপ্ন দেখলেও বিগত বছরগুলোর মতো এবারও একই অবস্থা। অথচ অন্যান্য মুসলিমপ্রধান দেশ কিংবা অনেক অমুসলিম দেশেও মুসলিম ব্যবসায়ীদের চিত্র বেশ ভিন্ন। তারা বছরের ১১ মাস ব্যবসা করে পবিত্র রমজান মাসকে ইবাদতের মাস হিসেবে নামাজ-রোজার বাইরেও পণ্যমূল্য বৃদ্ধি না করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মাঝে রাখে। রমজানের মূল স্পিরিট সংযমকে বাস্তবায়ন করে কাজে-কর্মে। বিপরীতে আমাদের দেশে রমজানকে টার্গেট করা হয় আয়-রোজগারের জন্য, যেন ১১ মাস তারা লোকসান গুনেছে, তাই রমজানেই সব সুদে-আসলে পূরণ করতে হবে।

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নাগরিকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটতে থাকলে পণ্যমূল্যের দাম আয়ের তুলনায় সমান হারে বাড়বে, তা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু মানুষের আয় না বাড়লেও নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে নাগরিকরা। শুধু খাদ্যপণ্যই নয়, কাপড়, নির্মাণসামগ্রী, ক্রোকারিজসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক হারে। ফলে অস্বাভাবিক বর্ধিত মূল্যে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় মধ্যবিত্তদের। আয়ের সঙ্গে খরচের সামঞ্জস্য না থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগে পতিত হতে হয়।

নাগরিকরা খাদ্যকষ্টে ভুগলে কিংবা খাদ্য দুর্ভোগে পতিত হলে এর দায়ভার সরকারের ওপরই বর্তায়। সেইসঙ্গে দেশের নাগরিক হিসেবে ব্যবসায়ীদেরও দায় আছে, দায়িত্ব আছে সাধারণ নাগরিকদের প্রতি। এছাড়া মুসলিমপ্রধান হিসেবে পবিত্র রমজান মাসে পণ্যের দাম কমার বিপরীতে বেড়ে যাওয়া কাম্য নয়, মুসলিম ব্যবসায়ীদের রমজানের মূল স্পিরিট বাস্তবায়ন করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কৃষিপ্রধান দেশের নাগরিকরা অস্বাভাবিক মূল্যে কৃষিপণ্য কিনবে, তা কাম্য হতে পারে না। 

জুবায়ের আহমেদ

শিক্ষার্থী

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম), ঢাকা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০