ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ইনসুলিনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এই রোগের কারণ হলো ইনসুলিনের ঘাটতি অথবা অকার্যকারিতা। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা পুরোটাই ইনসুলিননির্ভর। টাইপ-২ ডায়াবেটিস চিকিৎসারও একপর্যায়ে ইনসুলিন অপরিহার্য হয়ে ওঠে। সব মিলিয়ে একটা বড়সংখ্যক ডায়াবেটিসের রোগী ইনসুলিন নেয়া অবস্থায় রোজা রাখেন। রোজা রেখে ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীল ডায়াবেটিস রোগীরা কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন।
ইনসুলিনের অন্যতম প্রধান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ একেবারে কমে যাওয়া। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা প্রতি লিটারে ৩ দশমিক ৯ মিলিমোল বা তার নিচে নেমে গেলে একে বলা হয় হাইপোগ্লাইসেমিয়া। এমন হলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন, এমনকি মৃত্যু হতে পারে। মস্তিষ্কের কোষ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার প্রভাবে। রোজার সময় সব ধরনের ডায়াবেটিস রোগী অন্য সময়ের তুলনায় বেশি হাইপোগ্লাইসেমিয়ার শিকার হন। সে জন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রোজার সময় ইনসুলিনের ব্যবহার সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন থাকা দরকার।
ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখলে ইনসুলিনের পরিমাণ ও সময়সূচি সমন্বয় করতে রোজার আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। যারা দুই বেলা প্রাক-মিশ্রিত ইনসুলিন নিচ্ছেন, তারা সকালের সমপরিমাণ ইনসুলিন ইফতারের সময় নেবেন। রাতের ইনসুলিনের ডোজ অর্ধেক কমিয়ে সাহ্?রির সময় নেবেন। যারা স্বল্প সময়ে ক্রিয়াশীল (শর্ট অ্যাকটিং) ইনসুলিন তিন বেলা খাওয়ার আগে নিচ্ছেন, তাদের দুপুরের ইনসুলিন রোজার সময় না নিলেও চলে। সকালের সমপরিমাণ ইনসুলিন ইফতারের সময় নেবেন। আর রাতে নেয়া ইনসুলিন অর্ধেক মাত্রায় কমিয়ে সাহ্?রির আগে নেবেন।
সাধারণত লং অ্যাকটিং বা ব্যাসাল ইনসুলিন, যা রাতে একটি নির্দিষ্ট সময় নেয়া হয়, তার সময় ও মাত্রা পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় না।
ইফতারের আগে রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁঁকি সবচেয়ে বেশি। আবার ইফতারের দুই ঘণ্টা পর বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় মাত্রা অনেক বেশি, তবে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে হবে। আর যদি গ্লুকোজের মাত্রা কাক্সিক্ষত মাত্রার নিচের দিকে অবস্থান করে, তাহলে ইনসুলিন কমাতে হবে।
লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ, ঢাকা