সিগারেট ব্যান্ডরোলে কর ফাঁকি রোধে উদ্যোগ নিন

সিগারেট আইনিভাবে একটি বৈধ পণ্য। কিন্তু এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কাজেই বিভিন্ন আইনি বিধিবিধান প্রয়োগের মাধ্যমে এ ধরনের পণ্য নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ তামাক পণ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০০৫ সালে আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু সে আইন বাস্তবায়নে তেমন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। অনেকটা মুক্তভাবে দেদার ব্যবসা করে চলেছে সিগারেট কোম্পানিগুলো। তার ওপর বর্তমানে যুক্ত হয়েছে এ খাতে নানা কৌশলে কর ফাঁকি। নানা কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে অর্থের পাহাড় গড়ে তুলছেন সিগারেটসহ তামাক পণ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও তামাক পণ্যের অবৈধ বিস্তার রোধে জরুরিভিত্তিতে তামাক পণ্যের কর ফাঁকি রোধ করা উচিত বলে মনে করি।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘নকল ব্যান্ডরোলের ব্যবহার বাড়ছে নি¤œস্তরের সিগারেটে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বাজারজাত করা সিগারেটের প্রায় ১০ শতাংশ চোরাচালান, নকল ও ব্যবহƒত ব্যবহার করা সিগারেট, যাতে প্রতি বছর সরকার প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে। মূলত নি¤œস্তরের সিগারেটে নকল ও ব্যবহƒত ব্যান্ডরোল ব্যবহার করা হচ্ছে। এ তথ্য যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে দেশের স্বাস্ত্য খাতের জন্য বিষয়টি চরম উদ্বেগের বৈকি। কারণ দেশে ফুসফুসের ক্যানসার সৃষ্টির জন্য অনেকাংশে দায়ী এই সিগারেট। আর প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু হয় এই সিগারেট ও তামাক সেবনের কারণে। সুতরাং অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় যদি তামাক পণ্যের ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ পায়, তাহলে তাদের আর্থিক সক্ষমতা আরও জোরদার হবে এবং তারা সিগারেটের বাজার সম্প্রসারণে আরও বেশি উৎসাহিত হবেন। এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষ বিভিন্ন ধরনের তামাক পণ্য সেবন করেন। কর ফাঁকির মাধ্যমে যদি সংশ্লিষ্টরা বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ পান, তাহলে দেশে তামাক পণ্য সেবনকারীর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। এটি সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে ঘোষণা করেছিলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ রূপে তামাক মুক্ত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সে ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে হলে তামাক খাতের কর ফাঁকি রোধ করতেই হবে।

বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত তামাক কোম্পানিগুলো অত্যন্ত প্রভাবশালী। তা ছাড়া এ খাত থেকে এখনও পর্যন্ত একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণ হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ নিতে পারে। কাজেই রাজস্বের জন্য সরকার যাতে তামাক কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। সরকার উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০