শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মহামারিজনিত ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য তাঁর সরকার সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত সরকার ২৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এতে প্রায় ৬ কোটি ৭৪ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার।
বুধবার সন্ধ্যায় বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধের ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য পরিবহণেও ভাড়া ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এরফলে আমাদের দেশেও কিছু কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা কিন্তু চুপচাপ বসে নেই। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তি নিয়ে আসার।
তিনি বলেন, চলতি পবিত্র রমজান মাসে আমরা টিসিবি’র মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে প্রায় ১ কোটি পরিবারকে কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাশ্রয়ী দামে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। রাজধানী ঢাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতিদিন ১৫টি ফ্রিজার ভ্যানে করে সাশ্রয়ী দামে মাংস, ডিম এবং দুধ বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে, অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ইতোমধ্যে কমে স্বাভাভিক পর্যায়ে এসেছে। এছাড়া, সরকার আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ১ কোটি ৩৩ হাজার ৫৪টি ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে ১ লাখ ৩৩০ মেট্রিকটনের বেশি চালের বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে, কোনো ঋণ নেওয়া হয়নি। আমরা দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা অর্থনৈতিক সমীক্ষা চালিয়ে বাকি মেগা প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছি। শুধু ঋণের ভিত্তিতে নয়, বিদেশি অংশীদারিত্বের মাধ্যমেও অনেক মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, তাঁর সরকার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য দেশি ও বিদেশি ঋণ নিয়েছে। তবে, আমরা সতর্ক দৃষ্টি রেখেছি যাতে ঋণগুলো বোঝা হয়ে না যায়,’।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সম্পদ বৃদ্ধি এবং মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২২ এবং ২০২৩ হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক বছর। কারণ, আর কয়েক মাস পরেই চালু হতে যাচ্ছে বহুল আকাক্ষিত পদ্মাসেতু। এই সেতু জিডিপি-তে ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বছরের শেষ নাগাদ নাগাদ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল চালু হবে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আশা করা যায়, মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আর আগামী অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে কর্ণফুলির নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল।
তিনি বলেন, ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট আগামী বছরের শেষ নাগাদ চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। গত মাসে পায়রায় ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্ধারিত সময়ের আগেই উদ্বোধন করা হয়েছে। অন্যান্য মেগাপ্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত ১৩ বছরে যে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে তা অর্থনীতির সামস্টিক সূচকগুলো বিবেচনা করলেই স্পষ্ট হয়। ২০০৯ সালে জিডিপি’র আকার ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে তা ৪১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় ৭০২ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২,৫৯১ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
তিনি গণমাধ্যমের একাংশে অপ্রচারের সমালোচনা করে বলেন, কিছু কিছু গণমাধ্যমে এমনভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে যেন দেশে দুর্ভিক্ষস্থা বিরাজ করছে। আমি দৃঢ়ভাবে আপনাদের জানাতে চাই যে, দেশে চাল-সহ কোন পণ্যের ঘাটতি নেই। সাশ্রয়ী দামে পণ্য কেনার জন্য টিসিবি’র দোকানে মানুষ ভিড় করবে- এটাই স্বাভাবিক। এটাকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার কী কারণ থাকতে পারে?
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির সময়ও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আমাদের জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছর রেকর্ড ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে। এ বছরও আশানুরূপ রেমিটেন্স আসছে। গত বছর রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৪ দশমিক দুই-দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮ দশমিক ছয়-এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
শেখ হাসিনা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এ বছর রপ্তানি আয়ে বাংলাদেশ নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে, ইনশাআল্লাহ।’
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা ১৪২৯ বঙ্গাব্দের শুভ মুহূর্তে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সকলকে নিয়ে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় পুণর্ব্যক্ত করেন।
করোনাভাইরাসের কারণে বিগত দুই বছর জনসমাগম করে উন্মুক্ত স্থানে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানমালা করা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বছর বহিরাঙ্গনে সীমিত আকারে অনুষ্ঠানের আয়োজন হলেও করোনাভাইরাস একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। নতুনরূপে করোনাভাইরাস আবার যেকোন সময় যেকোন দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই, সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব অনুষ্ঠানে যোগদানের আহ্বান তিনি।
সূত্র: বাসস