শেয়ার বিজ ডেস্ক: শিশুদের বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক, ব্যাংকনোট, ম্যুরাল, সড়কের সিগন্যাল, দেহের ট্যাটু, সংবিধানÑপ্রায় সবখানে রয়েছে মালভিনাস যুদ্ধের ছাপ। এটি ৪০ বছর ধরে এভাবে বিশাল আবেগ হয়ে রয়েছে আর্জেন্টিনার সব অধিবাসীর কাছে। খবর: বুয়েন্স আইরেস টাইমস।
সরকারিভাবে দ্বীপটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এবং এর সরকারি নাম ফকল্যান্ড। ৪০ বছর আগে ১৯৮২ সালের ২ এপ্রিল আর্জেন্টিনা এই ছোট দ্বীপপুঞ্জ পুনর্দখলে অভিযান পরিচালনা করে, কিন্তু যুদ্ধে হেরে যায়। পরাশক্তি ব্রিটেনের দখলে থাকলেও দক্ষিণ জর্জিয়াসহ ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের দাবি থেকে একটুও পিছু হটেননি আর্জেন্টিনার তৎকালীন নেতারা। তাদের দাবি, এই অঞ্চলটির নাগরিক ও সার্বভৌমত্ব শুধুই আর্জেন্টিনার। ফকল্যান্ডকে নিজেদের অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশের পতন চায় আর্জেন্টিনা।
ফকল্যান্ডে বসবাস করছে প্রায় তিন হাজার ৫০০ মানুষ, যাদের বেশিরভাগ ব্রিটিশ। তাদের অনেকে প্রায় ১০ প্রজš§ ধরে দ্বীপটিতে বসবাস করছেন। আর্জেন্টিনার সমুদ্র উপকূলবর্তী শহরগুলো থেকে এখানে যাওয়ায় চিহ্ন দেখা যায়। দেশজুড়ে ফুটবল স্টেডিয়াম, শহর, সড়ক, এমনকি ৫০ পয়সার পেসোতেও ‘মালভিনাস আর্জেন্টিনার’ শব্দ দুটি মুদ্রিত রয়েছে।
ফকল্যান্ডে অভিযান পরিচালনার স্মরণে প্রতিবছর ২ এপ্রিল ঘটা করে উদ্যাপন করে আর্জেন্টিনা। ১৯৮২ সালের এদিন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত মোট ৭৪ দিন যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয় আর্জেন্টিনার। এতে আর্জেন্টিনার ৬৪৯ জন নাগরিক প্রাণ হারান। তাদের স্মরণে রাজধানী বুয়েন্স আইরেসে ডারউইন মিলিটারি সমাধিস্থলে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
‘আর্জেন্টিনা বেশ জটিল একটি দেশ। এখানে অনেক বিষয় নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। তবে কিছু বিষয় আমাদের মাঝে ঐক্য তৈরি করেছেÑমালভিনাস নিয়ে সবাই একই মতের ও পথের। মালভিনাস আমাদের কাছে জাতীয় ফুটবল দলের মতো।’ এ কথাগুলো বলেন রাজধানীর মালভিনাস মিউজিয়ামের পরিচালক এডগার্ডো এস্টেবান।
গত বছর আর্জেন্টিনার পাঁচ হাজার বাসিন্দা একটি জরিপে অংশ নেন। এতে ৮১ শতাংশ মানুষ জানান, ফকল্যান্ডের সার্বভৌমত্ব শুধুই আর্জেন্টিনার। মাত্র ১০ শতাংশ জানান, এ বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য করা উচিত নয়। দেশটির বিভিন্ন সরকার নানা সময় নানাভাবে দ্বীপটির সার্বভৌমত্ব দাবি করে। জাতিসংঘ আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সমাধানের জন্য আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্যের সরকারকে আমন্ত্রণ জানায়, যদিও সে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে লন্ডন। তবে আর্জেন্টিনাও জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী, জনগণের ভোটাধিকারকে সম্মান জানাতে অস্বীকার করে আসছে। এর আগে ২০১৩ সালে দ্বীপটির ৯৯ দশমিক আট শতাংশ অধিবাসী যুক্তরাজ্যের অধীনে থাকার জন্য গণভোট দেন। মূলত ব্রিটিশ পরিচয় হারাতে চান না তারা। কিন্তু ১৯৮২ সালের যুদ্ধের পর তাদের দাবি মানতে নারাজ আর্জেন্টিনার কোনো সরকার।
১৯৮০ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী আর্জেন্টিনার নাগরিক অ্যাডলফো পিরেজ এসকুইভেল বলেন, আমাদের ভূখণ্ড ইউরোপের কোনো একনায়কের কাছে ছেড়ে দিতে পারি না। এটা আমাদের জাতীয় দাবি। আমরা স্বৈরতন্ত্র চাই না।
ফকল্যান্ডের মালিকানা নিয়ে যুদ্ধে ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হয় আর্জেন্টিনা। ১৯৮৯ সালে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনেমের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়। তবে ফকল্যান্ডবাসীর (কেপলার নাম পরিচিত) মন জয়ে ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা। যদিও অন্যান্য আর্জেন্টাইনের মতো এস্টেবানও মনে করেন, ১৯৮২ সাল থেকে বন্দিদশায় রয়েছেন কেপলাররা।
ভবিষ্যতে এই ভূখণ্ড নিয়ে আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে নতুন করে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে যুদ্ধের পরিবর্তে বাণিজ্যযুদ্ধ পরিচালনা করতে আগ্রহী আর্জেন্টিনার বর্তমান সরকার।