বোতাম ও সেফটি পিনের আড়ালে সিগারেট আমদানি

নজরুল ইসলাম: বোতাম ও সেফটি পিনের ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা হয় সিগারেট। শুল্ক ফাঁকির খবরে সেসব চালান লক করা হয়। লক থাকা সেসব পণ্য চালান খালাসও করা হয়। অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করা হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিফাত ট্রেডিংয়ের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি বোতাম ও সেফটি পিনের ঘোষণা দিয়ে তিনটি এলসির বিপরীতে সিগারেট আমদানি করেছে। এর সঙ্গে একজন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারাও জড়িত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ৫ মার্চ দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (চট্টগ্রাম-১) মামলাটি (নম্বর ১৫) দায়ের করেন উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।

সিফাত ট্রেডিং ২০১৮ সালের ১১ জুন থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে তিনটি চালানে মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য সিগারেট আমদানি ও খালাস করেছে। সরকারি রাজস্ব বাবদ ৩২ কোটি ২৭ লাখ এক হাজার ৬৪৫ টাকা আত্মসাৎ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলাটি (নম্বর ১৪) করা হয়েছে।

এতে সিফাত ট্রেডিংয়ের মালিক সালাউদ্দিন টিটো, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চাকলাদার সার্ভিসের মালিক হাবিবুর রহমান চাকলাদার ওরফে অপু, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে অনুপ্রবেশকারী আবুল কামাল, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক, এআইআর শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা সুলতান আহম্মদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, উচ্চমান সহকারী আব্দুল্লাহ আল মাছুম ও অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। তারা সবাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

এজাহারে বলা হয়েছে, তিনটি চালান খালাসে রাজস্ব কর্মকর্তা ডিএএম মহিবুল ইসলামের ইউজার আইডি ব্যবহার করা হয়। তিনি বদলি হওয়ার পর তার আইডিতে অবৈধ অনুপ্রবেশ করা হয়। পাসওয়ার্ড অপব্যবহার করা হয়। এর সঙ্গে অনুপ্রবেশকারী আবুল কালাম ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক জড়িত।

সিফাত ট্রেডিংয়ের সালাউদ্দিন টিটো চীন থেকে বোতাম আমদানির জন্য ২০১৮ সালের ২৭ মার্চ এলসি খোলেন। ১১ জুন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন চাকলাদার সার্ভিসের হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে পণ্য চালানটির খালাস স্থগিত রাখতে বলা হয়। কিন্তু ২৬ সেপ্টেম্বর চালানটি খালাস দেয়া হয়। চালানটির কনটেইনার ৬৬ লাখ শলাকা সিগারেটের ধারণক্ষমতা-সম্পন্ন ছিল, যার শুল্ককর আট কোটি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ১০০ টাকা। পরিশোধ করা হয়েছে ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৮১ টাকা। জালিয়াতির মাধ্যমে আট কোটি তিন লাখ ৪৯ হাজার ৭১৮ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

চীন থেকে বোতাম আমদানির জন্য ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ আরেকটি এলসি খোলা হয়। লক থাকা চালানটি ২৬ সেপ্টেম্বর খালাস দেয়া হয়। চালানটির কনটেইনার ৬৬ লাখ শলাকা সিগারেটের ধারণক্ষমতা-সম্পন্ন। এই চালানটিতে আট কোটি তিন লাখ ৪৯ হাজার ৭১৮ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়।

ভারত থেকে সেফটি পিন আমদানির জন্য ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল এলসি খোলা হয়। ১১ জুন চালানটি লক করা হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অনাপত্তি পত্র অনুযায়ী বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৬ সেপ্টেম্বর চালানটি খালাস দেয়। এতে ৪০ ফুটের দুটি কনটেইনার ছিল, যাতে এক কোটি ৩২ লাখ শলাকার সিগারেট আমদানি হয়ে থাকে, যার শুল্ক কর ১৬ কোটি ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ২০১ টাকা। কিন্তু চালানটির বিপরীতে রাজস্ব পরিশোধ করা হয়েছে ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯২ টাকা। এতে ১৬ কোটি ২০ লাখ দুই হাজার ২০৮ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে। সালাউদ্দিন টিটোর বাড়ি নড়াইল শহরে। তিনি বর্তমানে ঢাকার মিরপুরে বাস করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০