আজ ষোড়শ সংশোধনীর আপিলের রায়  

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী হাইকোর্টে অবৈধ ঘোষণার রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের রায় আজ সোমবার ঘোষণার জন্য কার্যতালিকায় উঠেছে। গতকাল রোববার সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়।

‘সরকার বনাম আইনজীবী আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী এবং অন্যান্য’ এ মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি গত ১ জুন আপিল বিভাগ রায়ের জন্য কার্যতালিকায় রেখেছিলেন।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে বিষয়টি রায়ের জন্য রয়েছে। বেঞ্চের অপর ছয় সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়, যাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফিরে পায় সংসদ। বিলটি পাসের পর ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের ৯ আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর চলতি বছরের ৮ মে শুনানি শুরু হয়, যা ১ জুন শেষ হয়।

হাইকোর্টের এ রায় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও উত্তাপ ছড়িয়েছিল, সংসদে হয়েছিল ওয়াকআউট। অন্যদিকে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি আবার হাইকোর্টে রায়ের পক্ষে অবস্থান জানায়। এর মধ্যে আসাদুজ্জামান সিদ্দিকীসহ সুপ্রিমকোর্টের ৯ আইনজীবী একটি রিট আবেদন করেন হাইকোর্টে। ২০১৬ সালে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দেওয়া রায়ে সংবিধানের এ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

সংবিধান প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ এ মামলাটির আপিলের শুনানি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে করার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের চাপাচাপিতে আদালতেও উত্তাপ ছড়িয়েছিল। সংশোধনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতাই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ‘সংবিধানের ৯৬ ধারাটি সংবিধান প্রণেতারা প্রথম থেকেই রেখেছেন। মাঝখানে মার্শাল ল অথরিটি বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। তারাই এ সংবিধানকে বিকৃত করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল প্রভিশন ঢুকিয়েছে। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বরং আমরা সংবিধানের মূল জায়গায় ফিরে গেছি।’

অন্যদিকে শুনানিতে রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেছিলেন, সদ্য স্বাধীন দেশে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় সংবিধান তৈরির সময় বিচারকদের অপসারণের বিষয়টি সংসদের হাতে দেওয়া হয়েছিল। পরে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুই চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে তাতে পরিবর্তন আনেন।

বিচারক অপসারণে অস্ট্রেলিয়া, নামিবিয়া, পাকিস্তান, বুলগেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকার তথ্য তুলে ধরেন মনজিল মোরশেদ।

তিনি যুক্তি দেখান, বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার অধিকার সংরক্ষিত না থাকায় বিচারক অপসারণের ক্ষমতা আইনসভার হাতে থাকলে তা রাজনৈতিক ব্যবহারের আশঙ্কা থাকবে।

আর সংসদে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, হাইকোর্টের এ রায় ‘সংবিধান পরিপন্থী’। এটি আপিলে টিকবে না।

এর আগে গত ৭ মার্চ আপিল বিভাগ শুনানিতে জ্যেষ্ঠ ১২ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি (আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে নিয়োগ দেন। এদের মধ্যে ১০ জন আদালতে মতামত উপস্থাপন করেন। তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী টিএইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, এএফ হাসান আরিফ, এ জে মোহাম্মদ আলী ও এমআই ফারুকী ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে মত দেন। অপর অ্যামিকাস কিউরি আজমালুল হোসেন কিউসি সংশোধনীর পক্ষে মত দেন। অপর দুজন মত উপস্থাপন করেননি।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০