নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদ সামনে রেখে রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৮টায় ঢাকার কমলাপুর, বিমানবন্দর, তেজগাঁও ও ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। এদিন দেওয়া হয় ২৭ এপ্রিলের টিকিট।
সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, টিকিটের জন্য যাত্রীর উপচেপড়া ভিড়। স্টেশনের ১৬টি কাউন্টারের সামনেই দীর্ঘ লাইন। টিকিট নিয়ে বেরিয়ে আসা সানজিদা আখতার নামে এক নারী বলেন, ভাইয়া এসেছি গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়, এখন (৮টা ১৫ মিনিটে) পেলাম কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের টিকিট। হিসাব করে দেখেন, কত ঘণ্টায় টিকিট পেলাম। তারপরও পেয়েছি।
রেল স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানান, তারা প্রতিদিন প্রায় ২৭ হাজার টিকিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন। এই টিকিটের অর্ধেক স্টেশনের কাউন্টারে এবং বাকি অর্ধেক অনলাইনে বিক্রি হওয়ার কথা। তিনি বলেন, শনিবার থেকে অগ্রিম টিকিট কাটা শুরু হয় একযোগে অনলাইন ও কাউন্টারে। পাঁচটি স্টেশনে এ অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।
সায়েরা নামে আরেক নারী জানান, তিনি রাত থেকে অপেক্ষা করে টিকিট পেয়েছেন রংপুরের। পরিবারের চারজনের টিকিট নিয়েছেন তিনি।
অগ্রিম টিকিট কাটার সময়ে যাত্রীদের এনআইডি বা জš§সনদের ফটোকপি দেখাতে হচ্ছে। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারজনের টিকিট কিনতে পারছেন। সে ক্ষেত্রে তাকে অন্য তিনজনেরও এনআইডি বা জš§সনদ দেখাতে হচ্ছে।
শনিবার ২৭ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি হয়েছে। আজ রোববার বিক্রি হবে ২৮ এপ্রিলের টিকিট, সোমবার ২৯ এপ্রিলের টিকিট, মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিলের টিকিট এবং বুধবার ১ মের টিকিট বিক্রি হবে।
ঈদের পর ফিরতি যাত্রা শুরু হবে ৫ মে থেকে। সেই টিকিট বিক্রি হবে ১ মে। এরপর যথাক্রমে ৬ মের জন্য ২ মে, ৭ মের জন্য ৩ মে এবং ৮ মের জন্য ৪ মে টিকিট কেনা যাবে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২ মে ঈদুল ফিতর হবে। সে অনুযায়ী ঈদের ৯ দিন আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করল বাংলাদেশে রেলওয়ে। তবে ঈদ
যদি ৩ মে হয়, তবে ২৮ এপ্রিল বিক্রি হবে ২ মের ট্রেনের টিকিট।
গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে ঈদে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। দুই বছর পর ঈদযাত্রায় ফিরেছে ট্রেন।
ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য নিয়মিত ১০২টি আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে ৬ জোড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে চাঁদপুর স্পেশাল-১ ও চাঁদপুর স্পেশাল-২ ট্রেন চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে এবং ঈদের পর ৪ থেকে ৮ মে পর্যন্ত চলাচল করবে।
এছাড়া ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল একই সময়ে চলাচল করবে। ঢাকা-খুলনা রুটে খুলনা স্পেশাল ট্রেন বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসের অতিরিক্ত রেক দিয়ে চলাচল করবে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত।
এছাড়া ঈদের দিন ভৈরব বাজার ও কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়ায় স্পেশাল-১ এবং ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া স্পেশাল-২ চলাচল করবে।
টিকিটের জন্য সেহরি খেয়ে কমলাপুর স্টেশনে আসেন সোহরাব হোসেন। তিনি পরিবারকে নিয়ে ২৭ এপ্রিল যশোর যাবেন। তার চারটি টিকিট প্রয়োজন। সোহরাব বলেন, সেই ফজরের নামাজ পড়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখন বাজে সাড়ে ৯টায়। এখনও আমার সামনে ৩০ জন। হয়তো কাউন্টারের মুখে পৌঁছাব আরও ঘণ্টাখানেক পর।
টিকিট কাটার এ ভোগান্তি অবসানে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদে স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি যেতে ট্রেনই নিরাপদ বাহন। সেজন্য এত কষ্ট স্বীকার করেও অপেক্ষার পর অপেক্ষায় সময় গুনছি।
ভিড় হবে বলে আগেই পরিবারের সদস্যদের পাঠানোর জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্যাংককর্মী রাশেদা বেগম। তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েদের আগেই পাঠাব, যাতে তারা নিরাপদে গিয়ে দাদুর সঙ্গে থাকতে পারে। সেজন্য টিকিট কিনতে এসেছি। কিন্তু লাইনের গতি কম মনে হলেও শেষ পর্যন্ত সকাল ৯টায় টিকিট পেয়েছি হাতে। খুব ভালো লাগছে যে, তিন ঘণ্টা লাইনে থেকে এই টিকিট পেলাম।
সারারাত সংবাদপত্র বিছিয়ে অনেকে বসেছিলেন স্টেশনে। সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ওইসব পত্রিকার কাগজের স্তূপ একদিকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
কমলাপুর স্টেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ৩৬টি আন্তঃনগরে আসন সংখ্যা ২৬ হাজার ৭৭২টি। আরও কিছু বগি যোগ করে আসন সংখ্যা বাড়ানো হবে।
কমলাপুর স্টেশনে ১৬টি কাউন্টার থেকে বিক্রি করছে। নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা কাউন্টার খোলা হয়েছে। অনলাইন টিকিটে সার্ভারে ক্রটি হচ্ছে এমন অভিযোগও যাত্রীদের। ফলে অনেকে সার্ভারে ঢুকতে পারে না। সহজ ডটকম নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অনলাইন টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পেয়েছে। এর আগে সিএনএস নামে আরেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেনের টিকিট বিক্রি করত।
কালোবাজারি রোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা
কমলাপুরের স্টেশন ব্যবস্থাপক মাসুদ বলেন, কালোবাজারে টিকিট বিক্রি রোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখানে আরএমপি, র্যাব, পুলিশসহ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। রেলওয়ে বিভাগের কর্মকর্তারা সর্বক্ষণ মনিটরিং করছেন। যেন এটা নিশ্চিত হয়, টিকিট যাত্রীরা কাউন্টার থেকে পান। এই ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন চলবে ২৯ এপ্রিল থেকে। কমলাপুর স্টেশন থেকে এই ট্রেন যাত্রা শুরু করবে সকাল ৮টায়।
স্টেশন ব্যবস্থাপক মাসুদ জানান, ঢাকা থেকে খুলনা এবং ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জ এই দুটি বিশেষ ট্রেন চলবে, যার টিকিট বিক্রি হবে ২৫ এপ্রিল থেকে। তিনি জানান, প্রতিদিন কমলাপুর স্টেশন থেকে সাড়ে ৬ হাজার টিকিট বিক্রি হবে।
কেন অনলাইনে টিকিট পাওয়া যাচ্ছেন নাÑতার ব্যাখ্যা দিয়ে মাসুদ বলেন, বিষয়টা হচ্ছে, সহজ ডটকম বলছে যখন সকাল ৮টায় এটা ওপেন হয়, তখন একসঙ্গে সবাই টিকিট কাটার চেষ্টা করেন। ২-৩ লাখ লোক যখন হিট করে একসঙ্গে তখন তাদের ভাষায় সার্ভার জ্যাম হয়। সেজন্য সমস্যা হচ্ছে।
ঈদের আগাম ট্রেন টিকিটের ৯৮ শতাংশই কাউন্টার ও অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে বলে রেল বিভাগ জানিয়েছে। কমলাপুরের স্টেশন ব্যবস্থাপক মাসুদ সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে রিজার্ভের কোনো স্থান নেই। যেটা হয়েছে, ২ শতাংশ টিকিট রাখা হয় শুধু রেলওয়ের যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন তাদের সুবিধার্থে।
ভিআইপিদের জন্য আলাদা কোনো কোটা আছে কি নাÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যতটুকু জানি, এ কোটা বলবত নেই। এখন ২ শতাংশ ছাড়া ৯৮ শতাংশ টিকেটই কাউন্টার ও অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে যাত্রীদের জন্য।
সাধারণ যাত্রীদেরে অভিযোগ, ট্রেনে ভিআইপি কোটার নামে অনেক টিকিটই রাখা হয়। এমপি, সচিব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জন্য ‘অঘোষিত’ কোটা রয়েছে।