পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে স্কুল ব্যাংকিং

জয়নাল আবেদিন: দেশের সব মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার চেষ্টা করছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে পাঠ্যবইয়ে স্কুল ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি যুক্ত করা হচ্ছে। আগামী বছর থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে স্কুল ব্যাংকিংয়ের বিষয়টা যুক্ত হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।

তথ্য বলছে, ২০২১ সালের প্রথমদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্কুল ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি যুক্ত করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। এ প্রস্তাবের বিষয়টি আলোচনা এবং গবেষণার পর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড চলতি শিক্ষাবর্ষে মোট ৬২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে ‘জীবন ও জীবিকা’ বইয়ে ‘সঞ্চয়ের গুরুত্ব’ শিরোনামে স্কুল ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি যুক্ত করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে ছেলেমেয়েদের অর্থ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সঞ্চয় করার মনোভাব ও অভ্যাস গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস স্কুল ব্যাংকিং। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কুল ব্যাংকিং প্রচলিত আছে। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের খরচ কমানোর মাধ্যমে সঞ্চয় করার অভ্যাস গড়ে তুলতে এ ধরনের ব্যাংকিংয়ের শুরু হয়েছে। এটার প্রচার ও প্রসার দেশের জন্য কল্যাণকর।

জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে ষষ্ঠ শ্রেণির ‘জীবন ও জীবিকা’ বইয়ে ‘সঞ্চয়ের গুরুত্ব’ নামে অধ্যায় সংযোজন করার উদ্যোগ নেয়। যেখানে স্কুল ব্যাংকিং অন্তর্ভুক্ত থাকবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সূত্র বলছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকভাবে ৬২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি যুক্ত করা হলেও ২০২৩ সাল থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম যুক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ৫১টি স্কুল ও ৯টি মাদ্রাসা রয়েছে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র বলছে, এক চিঠির মধ্যমে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিকটস্থ এলাকায় ব্যাংকের শাখা বা বুথ খোলার অনুরোধ জানানো হয়। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৬২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে কাছে ব্যাংকগুলোর কোন কোন শাখা রয়েছে, তা জানতে চেয়ে চিঠি দেয়া হয়। পরে ব্যাংকের পক্ষ থেকে তা অবহিত করলে প্রতিষ্ঠানগুলোর সবচেয়ে কাছে যেসব ব্যাংক রয়েছে, সেই ব্যাংকে লিডিং ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুথ খোলার নির্দেশনা দেয়া হয়।

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, জীবন-জীবিকা বিষয়টিতে স্কুল ব্যাংকিং বা সঞ্চয় সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া হবে। যাতে ছোট থেকেই সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে উঠে শিক্ষার্থীদের। ২০২৩ সালে সারাদেশের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এবং ২০২৪ সাল থেকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব ক্লাসেই এ অধ্যায়টি যুক্ত করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সামনের দিনগুলোয় ব্যাংক ছাড়া চলা যাবে না। কারণ সব ধরনের লেনদেন অ্যাকাউন্ট নির্ভর

হয়ে যাচ্ছে। কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা ও বিভিন্ন বিল পরিশোধ এখন অপরিহার্য। ছোট থেকে ব্যাংকিং সম্পর্কে ধারণা থাকলে পরবর্তীতে জীবন পরিচালনা সহজ হবে। সে কারণেই এই উদ্যোগ।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে স্কুল ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকে এই স্টুডেন্ট ব্যাংকিং স্কিম চালু রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ে ২৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৩ শিক্ষার্থীর হিসাব খোলা হয়েছে এবং এর বিপরীতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২০৫ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থীদের আছে এক হাজার ২০২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং মেয়েদের এক হাজার তিন কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যার মধ্যে ৫২ শতাংশ হিসাব শহরাঞ্চলে এবং ৪৮ শতাংশ গ্রামাঞ্চলে। এ সময়ে গ্রামীণ পর্যায়ে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে হিসাব বেড়েছে এক দশমিক ২৩ শতাংশ। তবে শহরে ছয় দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কমেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০