শেয়ার বিজ ডেস্ক: বর্তমানে যুক্তরাজ্যে একটি ইলেকট্রিক ভেহিকেলের (ইভি) বার্ষিক জ্বালানি খরচ পেট্রোলচালিত যানবাহনের তুলনায় ৬০০ পাউন্ড কম। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর যুক্তরাজ্যে জ্বালানির খরচ বিদ্যুতের তুলনায় বেড়ে গেছে। খবর: দ্য গার্ডিয়ান।
গাড়ি-বাড়ি প্রভৃতি পণ্যের দাম নিয়ে তুলনা করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট কমপেয়ার দ্য মার্কেটের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ইভি পরিচালনা করা তুলনামূলক সস্তা। সম্প্রতি একটি পরিসংখ্যানে বিষয়টি আরও বিশদভাবে দেখিয়ে দেয়া হয়, যেখানে দেখা যায়, অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় ইভির খরচ বেশ কম। দামের হিসেবে ইভির সঙ্গে জ্বালানির পার্থক্য দিন দিন বাড়ছে।
কমপেয়ার দ্য মার্কেটের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে গড়ে বছরে একটি ইভির জন্য খরচ হয় এক হাজার ২৬৪ পাউন্ড, পেট্রোলচালিত গাড়ির বেলায় যা এক হাজার ৮৩৪ পাউন্ড। তবে যেকোনো গাড়ির পরিচালনা খরচ এক বছর আগের তুলনায় আরও বেড়েছে। পেট্রোলের দাম রেকর্ড বাড়ে মার্চে। চলতি মাসে কিছুটা কমে এর দাম, যদিও ১ এপ্রিল গৃহস্থালি জ্বালানি বিল পুনর্নির্ধারণ করা হয়, যেখানে বিদ্যুতের দামও বেড়েছে।
২০২১ সালের তুলনায় পেট্রোলচালিত গাড়ির খরচ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ৩০০ পাউন্ড বেশি বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৫৩০ পাউন্ড। একই সময় ইভি গাড়ির খরচ বাড়ে ১৩৭ পাউন্ড। এ হিসেবে ৪০৩ পাউন্ড থেকে এক লাফে ইভির খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪০ পাউন্ডে। এ খরচের মধ্যে রয়েছে বিমা, এমওটি টেস্ট ও জ্বালানিসহ আবগারি শুল্ক বাবদ ১৬৫ পাউন্ড (পেট্রোলচালিত গাড়ির ক্ষেত্রে)। এই আবগারি শুল্ক থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ইভিকে।
একজন চালকের বছরে ছয় হাজার ৭০০ মাইল ভ্রমণ ও পেট্রোলের দাম ১ দশমিক ৬২ লিটার (বিদ্যুতের দাম ২৮ পয়সা কিলোওয়াট আওয়ার) হিসাব করে এই গবেষণা করা হয়েছে। বিদ্যুৎচালিত গাড়ি চালানোর জন্য অনেক চালক বিশেষ ইভি শুল্ক সুবিধা পাচ্ছেন। এ সুবিধার আওতায় তাদের চার্জিং বিল কম আসে। অর্থাৎ প্রচলিত গাড়ির চালকের তুলনায় তাদের খরচ বেশ কম।
কমপেয়ার দ্য মার্কেটের পরিচালক অ্যালেক্স হ্যাস্টি বলেন, জ্বালানি খরচ বাড়ছে। তাই পেট্রোলচালিত গাড়ির মালিকরা যদি তাদের গাড়িকে ইভিতে রূপান্তর করতে পারেন, তাহলে পার্থক্যটা তারা বুঝতে পারবেন। তারা দেখতে পারবেন পেট্রোলের বিকল্প হিসেবে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির খরচ তুলনামূলক কম। তারা জ্বালানি, বিমা ও করের অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন। একই সঙ্গে পরিবেশের পক্ষে সহায়ক এ ধরনের গাড়ি। পরিবেশের দূষণ কমাতেও ভ‚মিকা রাখতে পারবেন চালকরা।
পেট্রোল ও ডিজেলের উচ্চমূল্য চালকদের কাছে ইভিকে বেশ আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এ কারণে ইভির বিক্রি বেড়েছে। শিল্পসংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত মার্চে ২০১৯ সালের ১২ মাসের তুলনায় দ্বিগুণ গাড়ি কিনেছেন ব্রিটিশরা।
তবে সবার সামর্থ্যরে মধ্যে নেই ইভি। হ্যাস্টি বলেন, ইভি গাড়ির দাম বেশ চড়া এবং ঘরে চার্জিং পয়েন্ট স্থাপন করা বেশ ব্যয়বহুল। তাছাড়া দেশের সব স্থানে চার্জিং স্টেশনের অভাব রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের সোসাইটি অব মোটর ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড ট্রেডারস (এসএমএমটি) জানায়, ২০১১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে দেশে ইভির সংখ্যা বাড়ছে। এ সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইক হাওয়েস জানান, ইভি গাড়ি তৈরিতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ছাপ রাখছেন উৎপাদকরা। কার্বনমুক্ত পরিবেশের পক্ষে সহায়ক গাড়ি নির্মাণে তারা বেশ সচেষ্ট। এ কারণে দিন দিন বাড়ছে ইভির গ্রাহক। তবে তাদের চাহিদা ধরে রাখার জন্য সাশ্রয়ী গাড়ি বিপণন ও চার্জিং স্টেশন নির্মাণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন হাওয়েস। স্টেকহোল্ডার, সরকার, স্টেশন মালিক ও জ্বালানি কোম্পানিগুলোকেও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।