ঈদের সময় ঘরে ঘরে তৈরি করা হয় নানা পদের মুখরোচক খাবার। এই আনন্দের মাঝেও আমাদের নজর দেয়া দরকার খাবারের দিকে যা খাচ্ছি তা স্বাস্থ্যকর কি না?
যাদের বয়স কম এবং শারীরিক কোনো সমস্যা নেই, তারা নিজের পছন্দমতো সবই খেতে পারেন, শুধু অতিরিক্ত না হলেই হলো।
খাবারের পরিমাণের দিকে নজর দেয়া উচিত সবার আগে। অনেকেই একসঙ্গে বেশি তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে হজম করতে পারেন না। পর্যাপ্ত পানি পান না করায় অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। এ ক্ষেত্রে শুরু থেকেই পরিকল্পনা থাকা দরকার। দিনের মূল খাবার, অর্থাৎ দুপুর ও রাতে খাবার কোথায় খাবেন, ঠিক করে ফেলুন। অন্য বাড়িতে গিয়ে যথাসম্ভব কম খান। পানি, শরবত, ফলের রস ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে গ্রহণ করুন।
যারা মাঝবয়সী বা বয়োবৃদ্ধ বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা আছে, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হƒদ্রোগ প্রভৃতি, তাদের খাবারের ব্যাপারে বেশি সতর্ক থাকা জরুরি।
ডায়াবেটিস রোগীকে অবশ্যই মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তারা বরং টক খাবারের মাধ্যমে রসনা তৃপ্ত করতে পারেন। মিষ্টি খেতে চাইলে চিনির বিকল্প দিয়ে তৈরি করে নেবেন। পোলাও-বিরিয়ানি কম খাবেন, ভাত খাওয়াই ভালো। মুরগি বা গরুর মাংস খাওয়া যাবে, যদি অতিরিক্ত তেল বা চর্বি না থাকে।
যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশি বা উচ্চ রক্তচাপ বা হার্টের সমস্যা আছে, তাদের অবশ্যই তেল-চর্বি এড়িয়ে যেতে হবে। কিডনির সমস্যা থাকলে প্রোটিনজাতীয় খাদ্য, যেমন মাছ-মাংস অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দিনে দুই টুকরার বেশি নয়। খাসি, কলিজা, মগজ ও চিংড়ি খাবেন না। যারা দুধ সহ্য করতে পারেন না, তাদের দুধের তৈরি খাবার এড়াতে হবে। কাঁচা সালাদ খেলেও অনেকে সমস্যায় পড়েন। পেট অতিরিক্ত ভরে খাবেন না। গোগ্রাসে না খেয়ে সময় নিয়ে চিবিয়ে খাবেন। খাবারের সঙ্গে সঙ্গে পানি না খেয়ে একটু পরে খাবেন। রাতে খাবারের পরপরই ঘুমাতে যাবেন না, দু-তিন ঘণ্টা পর ঘুমাবেন।
ফল, ফলের রস, সালাদ ইত্যাদি বেশি করে খাবেন। বিশেষ করে খাবারের শুরুতে সালাদ খেলে অন্য খাবারের জন্য জায়গা কমে যাবে। এ ছাড়া টক দই খেলে উপকার পাবেন। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে ঈদের আগের রাতে বা ঈদের সকালে ইসবগুলের ভুসি পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। দুপুর ও রাতে অবশ্যই সবজির একটি পদ রাখবেন। রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ঈদের দিন একটু বেশি হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।
ইসরাত জাহান
পুষ্টিবিদ, সাজেদা হাসপাতাল, ঢাকা