ব্যাংক এশিয়া ও আইএফআইসির এজিএম: নিয়ম লঙ্ঘন করে আপ্যায়ন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ব্যাংক এশিয়া ও আইএফআইসি ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) বিনিয়োগকারীদের আপ্যায়ন করানো হয়েছে। এ নিয়ে এজিএম অনুষ্ঠানে কিছুটা হইচই হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডের লেডিস ক্লাবে ব্যাংক এশিয়ার এবং বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে আইএফআইসি ব্যাংকের এজিএমে এ ঘটনা ঘটে। অপরদিকে আপ্যায়নের পাশাপাশি চেয়ারম্যানের বিদেশ যাওয়ার শিডিউল থাকায় আইএফআইসি ব্যাংকের এজিএম দশ মিনিটের মধ্যে তাড়াহুড়া করে শেষ হয়েছে।

এদিকে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এক সার্কুলারে এজিএম অনুষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের উপহার দেওয়া ও আপ্যায়ন না করায় কঠোর নির্দেশ রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ব্যাংক এশিয়া ও আইএফআইসি বিনিয়োগকারীদের আপ্যায়ন করিয়ে বিএসইসিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালো বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যাংক এশিয়ার এজিএমে উপস্থিত বিনিয়োগকারীরা জানান, বার্ষিক সাধারণ সভায় আগতের জন্য পূর্ব থেকে আপ্যায়নের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ব্যাংক এশিয়া কর্তৃপক্ষ। এজিএমের পাশাপাশি তারা বিনিয়োগকারীদের জন্য চা, মিষ্টি, শিঙাড়া, সমুচা ও কেক দিয়ে আপ্যায়ন করানো হয়েছে। বেশ কিছু বিনিয়োগকারীদের জন্য আলাদা ভারি খাবারও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেখানে ভারী খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে অতিরিক্ত কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

শরিফুল নামের একজন বিনিয়োগকারী জানান, আমাদের মিষ্টি, কেক ও শিঙ্গাড়া এবং সমুচা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে। তবে অপরপাশে কিছু বিনিয়োগকারীদের বিরিয়ানী দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে। সেখানে নির্দিষ্ট লোকজনের বাইরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে ব্যাংক এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘এজিএমে কোনো ধরনের উপহার বা আপ্যায়ন না করানোর জন্য বিএসইসি অনেক আগেই সার্কুলার দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে।’ তারপরও যদি কেউ তা লঙ্ঘন করে তাহলে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে, আইএফআইসি ব্যাংকের এজিএমেও চা, কফি, কেক, শিঙাড়া, সমুচা ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করানো হয়েছে। পাশাপাশি চেয়ারম্যানের বিদেশে যাওয়ার শিডিউল থাকায় তারা এজিএম দ্রুত অর্থাৎ দশ মিনিটে শেষ করেছে বলে অভিযোগ করেছে শেয়ারহোল্ডাররা। দশ মিনিটে এজিএম শেষ করে আইএফআইসি ব্যাংকের পক্ষ থেকে শেয়ারহোল্ডাররা আপ্যায়ন করে।

এজিএম অনুষ্ঠানে ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডাররা তাদের মতামত তুলে ধরতে চাইলে কর্তৃপক্ষ জানায়, চেয়ারম্যান স্যার বিদেশে যাবেন। দুপুর ১২টায় ফ্লাইট, সুতরাং বেশি কথা বলার সুযোগ নেই। এ সময় একদিক দিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করতে থাকলে ‘এজিএম পার্টি’ নামে খ্যাত শেয়ারহোল্ডাররা পাস পাস বলেন।

পলাশ নামের একজন শেয়ারহোল্ডার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি লভ্যাংশ বাড়ানোর বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তাড়াহুড়ার ও এজিএম পার্টির কারণে কোনো কথা বলতে পারিনি।’ তবে এজিএমে খেতে পেরে তিনি অনেকটা আনন্দিত বলে জানান।

আইএফআইসির এজিএমে  ব্যাংকটির চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শাহ আলম সারওয়ার, পরিচালক জালাল আহমেদ এবং কোম্পানি সচিব একেএম মোজহারুল হক উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে ব্যাংক এশিয়ার এজিএমে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এ রউফ চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী, পরিচালক মশিউর রহমান ছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মন খুলে কথা বলতে পারতো। শেয়ারহোল্ডারদের দাবি পর্যালোচনা ও বিবেচনা করতো পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু পরবর্তী সময় এক শ্রেণির কথিত শেয়ারহোল্ডার (কয়েকটা শেয়ারধারী) সাধারণদের চাপের মুখে রেখে তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতো উপহার সামগ্রী নিয়ে। কোম্পানির কর্তৃপক্ষও তাদের আপ্যায়ন ও উপহার দিয়ে খুশি রাখতো। এতে সহজে দু-চার মিনিটে এজিএম শেষ করার নজিরও আছে। এক সময় এজিএম পার্টি নামে এসব শেয়ারহোল্ডার কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এতে প্রায় এজিএম অনুষ্ঠানে উপহার ও আপ্যায়ন নিয়ে হাতাহাতি ও ঝগড়ার ঘটনাও ঘটেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেই বার্ষিক সাধারণ সভায় উপহার ও আপ্যায়ন নিষিদ্ধ করে সার্কুলার জারি করে, যা বেশিরভাগ কোম্পানি মানলেও কিছু প্রতিষ্ঠান মানছে না। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা লঙ্ঘনকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০