নিজস্ব প্রতিবেদক: আমদানি থাকলেও খুচরা বাজারে সরবরাহ সংকটের মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়িয়েছেন মিল মালিকরা। এতে আজ থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশন। একইসঙ্গে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করতে হবে ১৮০ টাকা এবং পাম সুপার বিক্রি হবে ১৭২ টাকা লিটার দরে।
গতকাল সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষের সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন নেতাদের বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকেই ভোজ্যতেলের নতুন এই দাম নির্ধারিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে যুদ্ধের কারণে ভোজ্যতেলের দাম অত্যধিক মাত্রায় বেড়েছে। ফলে দাম সমন্বয় না করলে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারত না। সে কারণেই ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অ্যাসোসিয়েশন একটি দাম প্রস্তাব করে। সেটি নিয়মানুযায়ী দেখে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব নিয়মনীতি অনুসরণ করেই ভোজ্যতেলের নতুন দাম সমন্বয় করা হয়েছে।’
নতুন দর অনুযায়ী খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা, যা এতদিন ১৪০ টাকা ছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করা হয়েছে। আর ৫ লিটারের বোতলের দাম হবে ৯৮৫ টাকা। এতদিন যা ছিল ৭৬০ টাকা।
আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে মিল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ভোজ্যতেলের দাম ঘোষণা করা হলেও এবার মিল মালিকরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজেরাই মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন।
ঈদের পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফাচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক বার্তায় ভোজ্যতেলের নতুন দর ঘোষণা করা হয়।
নতুন মূল্য তালিকা অনুযায়ী, পরিশোধিত পাম সুপার তেল প্রতি লিটারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে ১৭২ টাকা, যা এতদিন ছিল ১৩০ টাকা। সেই হিসাবে পাম তেলের দাম বেড়েছে ২৪ শতাংশ। আর সয়াবিনের দাম খুচরায় বেড়েছে ২৮ শতাংশ, বোতলজাতের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সয়াবিনসহ ভোজ্যতেলের দর বিশ্ববাজারে চড়তে থাকায় দেশের ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়ানোর পক্ষে বলছিলেন। এর মধ্যে রোজার শেষ দিকে ঈদের আগে হঠাৎ করেই খুচরা বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যায়, যদিও আমদানিতে কোনো সংকট ছিল না।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ গত ফেব্রæয়ারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৮ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল ১৪৩ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে মিল মালিকরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে মন্ত্রণালয়ে গেলেও সরকার সায় দেয়নি। গত মার্চের মাঝামাঝিতে তেলের আমদানি, পরিশোধন ও বিক্রয় পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের পর লিটারে ৮ টাকা করে দাম কমানো হয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে এপ্রিল ও মে মাসে ধীরে ধীরে বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিতে থাকেন মিল মালিকরা। দাম বৃদ্ধির আশায় ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতারাও তেলের মজুত শুরু করেন। এসব ঘটনা ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ধরা পড়ে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তেলের দাম নিয়ে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে সেটা আমরাও বুঝতে পারছি। ভারতে লিটার ২০৫ টাকা করেছে। ইংল্যান্ডে তেলের বিক্রি সীমিত করে দেয়া হয়েছে। জার্মানে আরও খারাপ অবস্থা। ব্রাজিল সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী, তারাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে, বিশ্বব্যাপী সংকট দেখা দিয়েছে। এখন বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এখন দেখা যাক তারা কী করে।’