নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আমদানি ব্যয়। সেই তুলনায় বাড়ছে না রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। সম্প্রতি আকুর রেকর্ড আমদানি বিল পরিশোধের পর বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন (৪ হাজার ২০০ কোটি) ডলারের নিচে নেমে এসেছে। যা গত দেড় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে, ২০২০ সালের নভেম্বরে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার।
গত ৫ এপ্রিল এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন (২২৪ কোটি) ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে কখনই আকুর এত বেশি বিল শোধ করেনি বাংলাদেশ। এর ফলে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ সূচক ৪১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
বর্তমানের আমদানির খরচ হিসাবে এ রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। যদিও সাত-আট মাস আগেও ১০ মাসের আমদানি খরচ মেটানোর রিজার্ভ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মহামারি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর থেকেই দেশে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার আগে মাসে আমদানি খাতে গড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হতো। করোনার মধ্যে তা কমে গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আমদানি ব্যয়। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়। আগস্টে তা বেড়ে ৬ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। সেপ্টেম্বরে তা গিয়ে ঠেকে ৭ বিলিয়ন ডলারে।
অক্টোবরে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয় ৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। নভেম্বরে তা বেড়ে ৭.৮৫ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। ডিসেম্বরে তা আরও বেড়ে ৮ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। জানুয়ারি মাসে ৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। সবশেষ ফেব্রæয়ারি মাসে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৮ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত আমদানি বাড়ার কারণেই রিজার্ভ কমছে। এছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের নিন্মগতি রিজার্ভ কমার আরও একটি কারণ বলে জানিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এ দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। প্রতি দুই মাস পরপর এ আকুর বিল পরিশোধ করতে হয়।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়। গত জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি পণ্য আমদানি খরচের হিসাবে বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রæয়ারি সময়ে ৫৮ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি (সিঅ্যান্ডএফ) করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৬ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি।
রেমিট্যান্সের ১০ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই দশ মাসে ১৭ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ কম। অন্যদিকে, রপ্তানি আয় বাড়লেও আমদানির তুলনায় অনেক কম। ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩৮ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।
