নিজস্ব প্রতিবেদক: এ মুহূর্তে চরম সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ঋণ ফেরতের সম্ভাবনা খুবই কম। তাই ঋণ পরিশোধের জন্য আরও এক বছর সময় বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এখন তাদের (শ্রীলঙ্কার) চাপাচাপি করে কোনো লাভ নেই। তাই ঋণ পরিশোধে আরও এক টেনিয়র (বছর) সময় বাড়ানো হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ থেকে নেয়া ২০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধে আরও এক বছর সময় পেল দেশটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় কারেন্সি সোয়াপ চুক্তির আওতায় দেশটির অনুকূলে তিন দফায় ২০ কোটি ডলার ছাড় করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেশটির সরকারের গ্যারান্টি রয়েছে। তিন মাস মেয়াদি কারেন্সি সোয়াপ হলেও চুক্তিতে এক বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ফলে তিন মাস পরপর এক বছর পর্যন্ত এ ঋণের মেয়াদ এমনিতে বাড়বে। এ ক্ষেত্রে লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেট বা লাইবরের সঙ্গে দেড় শতাংশ সুদ পাবে বাংলাদেশ। অর্থ ছাড়ের পর থেকে সুদ ও পরিশোধের সময় হিসাব করা হবে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দফায় গত বছর ১৯ আগস্ট পাঁচ কোটি ডলার ছাড় করে বাংলাদেশ ব্যাংক। দ্বিতীয় দফায় ১০ কোটি ডলার দেয়া হয় গত বছর ৩০ অক্টোবর। বাকি পাঁচ কোটি ডলার দেয়া হয় গত বছর নভেম্বরে। শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ঋণের পরিমাণ সব মিলিয়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় এক হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। যে অর্থ যেদিন ছাড় হয়েছে, ওইদিন থেকে মেয়াদ হিসাব হবে। ফলে বিদ্যমান চুক্তির আওতায় চলতি বছর আগস্ট, অক্টোবর ও নভেম্বরের মধ্যে সুদসহ অর্থ ফেরত দিতে হবে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগের সময়ের সঙ্গে আরও এক বছর যুক্ত হবে এখন।
এদিকে আইনি সীমার অতিরিক্ত ঋণ দেয়ায় পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার কবলে পড়ে বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল)। এই জরিমানা মওকুফের আবেদন করলে তা নাকচ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বোর্ড মিটিংয়ে থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক একটি স্পর্শকাতর জায়গা। এখানে ভুল করার কোনো সুযোগ নেই। তাই কেউ যদি ভুল করে, তাহলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে, যেন পরবর্তীকালে এ ধরনের ভুল কেউ না করে। এ কারণে ইস্টার্ন ব্যাংককের জরিমানা মওকুফের আবেদন নাকচ করা হয়েছে।
এর আগে সীমার অতিরিক্ত ঋণ দেয়ায় ইস্টার্ন ব্যাংকে গত ৩ এপ্রিল পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। জরিমানার ওই অর্থ ১৪ দিনের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়। তা না হলে ব্যাংকটির হিসাব থেকে কেটে নেয়া হবে বলে জানিয়ে তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেয়া হয়। তারা জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করে তা মওকুফের আবেদন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় তা বাতিল করা হয়।
জানা গেছে, ইবিএল তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইবিএল ফাইন্যান্স (এইচকে) লিমিটেড ও ইবিএল সিকিউরিটিজকে সীমা অতিক্রম করে ঋণ দিয়েছে। একক গ্রাহকের ঋণসীমা অতিক্রম করে ঋণ দেয়া হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছিল, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬(খ) ধারা লঙ্ঘন এবং এই ঋণ অনুমোদনে একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রমের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি নেয়া হয়নি। এ নিয়ে ব্যাংকটি গত বছর ১৯ ডিসেম্বর ও গত ৩ ফেব্রুয়ারি ব্যাখ্যা দিলেও তা গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬(খ) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে দেয়া সব ঋণসুবিধার পরিমাণ ওই ব্যাংকের রক্ষিত মূলধনের শতকরা ২৫ ভাগের বেশি হবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ইবিএল দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে সীমার অতিরিক্ত ঋণ দেয়, তার মধ্যে ইবিএল ফাইন্যান্স (এইচকে) লিমিটেড ঋণপত্রে উপদেশ, রপ্তানি নথিপত্র ব্যবস্থাপনা ও রপ্তানি খাতে অর্থায়ন করে থাকে। আর ইবিএল সিকিউরিটিজ শেয়ারবাজারে লেনদেনের পাশাপাশি গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে থাকে।
গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক, ডেপুটি গভর্নর ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।