বিশ্ববাজারে খাদ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে ‘কৃচ্ছ্র সাধন ও সাশ্রয়ী’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সরকারপ্রধানের তরফ থেকে এ নির্দেশনা আসে। পরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় টান পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার (ডলার) রিজার্ভে। ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পড়ে যাচ্ছে টাকার মান। সরকার বলে আসছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি গত কয়েক বছরে যে ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে, তাতে বিরূপ পরিস্থিতিতে থাকা প্রতিবেশী দেশের পরিণতি হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই। তবে বিশ্বের কয়েকটি বড় ব্যাংক সামনের দিনগুলোয় মন্দার আভাস দেয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরাও আর্থিক নীতিতে সংযমী হওয়ার তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। মঙ্গলবার এনইসি সভায় খোদ সরকারপ্রধানের কৃচ্ছ্র সাধনের নির্দেশনা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে আমরা মনে করি।
কৃচ্ছ্র সাধনে সরকারও সাধ্যমতো বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধে প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন। সরকারি কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের পর রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বিদেশভ্রমণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরিপত্র অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারির প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিলের অর্থে বিদেশভ্রমণও বন্ধ থাকবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে গত ১২ মে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় বিদেশ সফর বন্ধ করা হয়।
নিজেদের প্রয়োজনেই আমাদের সুবিবেচক হতে হবে। এতটুকু সম্পদ অহেতুক অপচয় কিংবা নষ্ট করা যাবে না। কোনো দেশের সঙ্গে তুলনা নয়। কিন্তু অন্য দেশ যে সমস্যায় জর্জর, তা দেখে আমরা সতর্ক পারি।
এদিকে দেশের ডলার মার্কেটে কারসাজির গুঞ্জন রয়েছে। খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়ে ১০২ টাকা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে, কারসাজির প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, বাংলাদেশ বিনিময় হার কখনোই বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়নি। অর্থনীতি যখন স্বস্তিদায়ক অবস্থায়, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে কোনো সংকট ছিল না, তখনও টাকার বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এখন চরম সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিস্থিতি সামাল দিতে দফায় দফায় টাকার মান কমাচ্ছে। দুঃখজনক হলো, নির্ধারিত মূল্যে ডলার কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঠিক করে দেয়া দর হচ্ছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা, কিন্তু ব্যাংকে কিনতে হচ্ছে কমবেশি ৯৫ টাকা দরে। আর খোলাবাজারে ডলার তো শতক ছাড়িয়েছে। খোলাবাজারে মঙ্গলবার ডলারের মূল্য ছিল ১০২ টাকা, তাও আবার সহজে পাওয়া যায়নি। ডলারের দর বেড়ে যাওয়া মানেই আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া। আমাদের রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি। প্রায় সব ধরনের পণ্য বেশি দামে আমদানি করতে হচ্ছে। ভোজ্যতেল ও গমের দাম বাড়াচ্ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এবং তাতে সফল হবে। নাগরিকদেরও ব্যক্তিগতভাবে সচেতন হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা অর্থনীতির নানা সূচকের স্থিতিশীলতাকে ধরে রাখতে সক্ষম হবো।