আসবাবশিল্পের বাজারে আভিজাত্যের নাম আকতার। শোবারঘর ও ডাইনিং আসবাবের পাশাপাশি লিভিং রুম, স্টাডি রুম, চিলড্রেন রুম, ফ্লোরিং, রান্নাঘর ও অফিসের উন্নতমানের আসবাব তৈরি করে আকতার। একই সঙ্গে লাইটিং শোপিস, আনুষঙ্গিক উপকরণ এবং বিবিধ পণ্যও বাজারজাত করে থাকে আকতার ফার্নিশার্স। কোম্পানিটির যাত্রা শুরু ১৯৭৬ সালে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠান আকতার গ্রুপ নামে পরিচিত।
সুযোগ্য নেতৃত্ব ও কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কল্যাণে এ প্রতিষ্ঠানের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঘটেছে। তাই আসবাব থেকে ধীরে ধীরে অন্যান্য খাতেও বিনিয়োগ করছে গ্রুপটি। বর্তমানে এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আকতার মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড, আকতার টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, ট্রাস্ট বিল্ডার্স লিমিটেড, পেন্টা প্রপার্টিজ লিমিটেড, আকতার রিয়েল স্টেট লিমিটেড, আকতার কনস্ট্রাকশনস লিমিটেড, আকতার ফার্নিচার একাডেমি, আকতার ম্যাট্রেস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আকতার ফুডস অ্যান্ড বেভারেজেস লিমিটেড, আকতার ফোম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আকতার বোর্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আকতার পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সানাফির ফ্যাশনস লিমিটেড ও আকতার ডোর ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। পাশাপাশি যৌথ মালিকানায় জাত হোল্ডিংস বাংলাদেশ (প্রাইভেট) লিমিটেড এবং থাই-বাংলা টুলস লিমিটেডও পরিচালনা করছে আকতার গ্রুপ। তবে আসবাব থেকে অন্যান্য খাতে ব্যবসার পরিধি বাড়ালেও মূল ব্যবসাটিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয় আকতার গ্রুপ।
আকতার গ্রুপের সফলতা প্রসঙ্গে চলে আসে এর প্রাণপুরুষ কেএম আকতারুজ্জামানের কথা। তার নামেই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে। তিনি রাজবাড়ীর কালুখালী গ্রামে জš§গ্রহণ করেন, ১৯৫৬ সালে। ব্যবসার প্রতি তার ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। মাত্র ১২ বছর বয়সে শুরু করেন স্টক পণ্যের ব্যবসা। বেশ সফল হন প্রথম ব্যবসায়। ফলে আরও বড় পরিসরে ব্যবসা পরিচালনায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। সেই ধ্যানধারণা থেকে আসবাব ব্যবসায় মনোযোগী হন। ১৯৭৫ সালে স্বল্প পরিসরে কয়েকজন কারিগর নিয়ে তৈরি করেন আকতার ফার্নিশার্স। ১৯৭৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনে নামে তার প্রতিষ্ঠান। কারখানা স্থাপন করা হয় ঢাকার ফরাশগঞ্জে। শুরু থেকে নিজের প্রতিষ্ঠানকে মডেল হিসেবে দাঁড় করাতে চেয়েছেন, সফলও হয়েছেন। গ্রাহক চাহিদা ও উন্নত প্রযুক্তির মিশেলে আসবাবে আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। মূলত তার উদ্ভাবনীশক্তি, সৃজনশীলতা, পরিচালনা ও গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের কারণে অভিজাত পরিবেশে স্থান করে নিয়েছে আকতার ফার্নিশার্স। তিনিই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন দাতো কে এম রিফাতুজ্জামান। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ফিনিক্স থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্টে পড়াশোনা শেষ করে ২০০৭ সালে পরিচালনা পর্ষদে যোগ দেন।
ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে আকতার ফার্নিশার্সের নিজস্ব শোরুম রয়েছে। কোনো ডিলারের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা না করে সরাসরি নিজস্ব শোরুমের মাধ্যমে ব্যবসা চালায় আকতার। বাংলাদেশ আসবাব রফতানিকারক সংগঠনের (বিএফইএ) তথ্যমতে, আকতার ফার্নিশার্স, অটবি, নাভানা, হাতিল, প্যাসিফিকসহ মোট ১৮টি প্রতিষ্ঠান বিএফইএ’র সঙ্গে মিলিত হয়ে বিদেশে আসবাব রফতানি করছে। প্রসঙ্গত এ সমিতির বাইরে আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও বিদেশে আসবাব রফতানি করছে।
আকতার ফার্নিশার্সে কাজ করছেন কয়েক হাজার কর্মী। কর্মীদের দক্ষতা ও নিষ্ঠার কারণে জাতীয় সংসদ ভবন, জাতীয় জাদুঘর, সিডিপি, আশুগঞ্জ সার কারখানা, পাকশী ব্রিজ প্রভৃতি খ্যাতনামা প্রকল্পে সঙ্গী হয়েছে আকতার ফার্নিশার্স।
আকতার ফার্নিশার্স আইএসও সনদ ৯০০১ অর্জন করে ২০০১ সালে। দেশের উন্নয়নে অবদানের কারণে নানা ধরনের পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে আকতার গ্রুপ। এর মধ্যে এসএমই ফেয়ার ও হোম-শো’তে অর্জন করেছে কোয়ালিটি অ্যাওয়ার্ড, কন্থখারু ও রাউজান সমিতির অ্যাওয়ার্ড ফর ফার্নিচার বিজনেস, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড ও একতা কালচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল অরগানাইজেশনের অ্যাওয়ার্ড ফর বিজনেস পারফরম্যান্স উল্লেখযোগ্য।
Add Comment