সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি ঊর্ধ্বমুখী ডিমের দামও

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রায় সব জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। অনেক এলাকায় অতিবৃষ্টির কারণে তলিয়ে গেছে কৃষকের ফসল, যার প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। উৎপাদন ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি। এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকে আটা-ময়দাসহ সয়াবিনের দাম। এ ছাড়া ডিমের দামও বেড়ে গেছে।

দেখা গেছে, বাজারে সবজির দাম সর্বনিন্ম ৫০ টাকা। শুধু আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজিতে। এই অবস্থায় ক্রেতারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্তদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। গতকাল রাজধানীর বাড্ডা এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কচুরমুখি ৮০ টাকা, পেঁপে, টমেটো ও বেগুন ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স, পটোল ও ঝিঙা ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

বাড্ডা এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো না। মানুষের আয় কমে গেছে। অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে ঘুরছে। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ভালো না। বাজারের অবস্থাও যদি এমন ঊর্ধ্বমুখী হয়, তাহলে বাজার করব কী করে? সংসার চলবে কী করে?

রামপুরা এলাকার সাইলা বেগম জানান, অসুস্থতার কারণে বাসায় কাজ করতে পারেন না। সংসারে একমাত্র কর্মক্ষম স্বামী দিনমজুর। সারাদিন কাজ করে রোজগারের ৫০০ টাকা চাল-ডাল কিনতেই চলে যায়। সবধরনের সবজির দাম বেশি হওয়ায় বাজারে এসে খুঁজতে হয় কম দামি সবজি।

সাইলা বেগম বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের যেই দাম, সে অনুযায়ী তো পারিশ্রমিক বাড়ে না। দৈনিক কাজ করে যেই টাকা আসে, তা দিয়ে বাজারই হয় না। চালের দাম বাড়তি, তেলের দামও কিছুদিন পর পর বাড়ে। সবজির দামও বাড়তির দিকে। চারজনের সংসার টানতে খুবই কষ্ট হয়।

খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর থেকেই কাঁচা সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেশি। এরপর আবার বৃষ্টির কারণেও বাজারে তেমন সবজি আসছে না। আসতে গেলে বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে প্রতি কেজি সবজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে খুচরা বাজারে।

বাজারের প্রবেশ মুখেই আলু, পটোল, চিচিঙ্গা, টমেটোসহ অন্যান্য সবজি সাজিয়ে বসেছেন আকবর আলী। সবজির দামের প্রসঙ্গে এই বিক্রেতা বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ মোটামুটি কম। যেরকম চাহিদা আছে, তার চেয়ে যদি সরবরাহ কম থাকে দাম তো বেশিই হবে।

তিনি বলেন, কয়দিন পরপরই বৃষ্টি হচ্ছে। আর বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে গেলে বাজারে সবজি কমে যায়। বিভিন্ন জেলা থেকেও এই সময়ে সবজি আসতে পারে না। তাই সব সবজিরই এখন দামটা বেশি।

এদিকে টিসিবির দেয়া তথ্যমতে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ময়দার (প্যাকেট) দাম এখন ৭০ টাকার বেশি। আর খোলা আটার দাম ৪৬ টাকার বেশি। গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে দেখা গেছে, আটা ও ময়দায় মানভেদে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বাড়ছে। আর এক মাসের ব্যবধানে তা কেজিতে ১০ টাকা ছাড়িয়েছে। সয়াবিন তেল নিয়ে ভোগান্তির মধ্যেই আটা, ময়দার এই দাম বৃদ্ধিতে শঙ্কিত ভোক্তারা। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।

আর এ সপ্তাহে নতুন করে বেড়েছে চালের দামও। অর্থাৎ আগের সপ্তাহের ৪৪ টাকা কেজি দরের মোটা চাল এক টাকা বেড়ে এখন ৪৫ টাকায় এবং ৫৫ টাকা কেজি দরের মাঝারি মানের চালের দাম ৫৬ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। আর সবচেয়ে ভালো চালের দাম এখনও আগের দামেই (৬৮-৭৫ টাকা কেজি) বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে গত সপ্তাহের পর এ সপ্তাহেও বেড়েছে ডিমের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে। এখন এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১১০ টাকা।

এদিকে ঈদের আগে কেজি ৭০০ টাকায় উঠে যাওয়া গরুর মাংসের দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তবে বেশকিছু মহল্লার সাপ্তাহিক ব্যবসায়ীরা গরুর মাংসের কেজি বিক্রি করছেন ৭২০ টাকা কেজি দরে।

গরুর মাংস বাড়তি দামে বিক্রি হলেও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কমে এখন ১৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭০ টাকা। আর ঈদের আগে ছিল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা। সোনালী মুরগির কেজি আগের মতোই ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহের মতো রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। শোল মাছের কেজি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। কৈ মাছের কেজি ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। পাবদার কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায়। ৫০০-৬০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৬০ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০