বিএনপি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বাকশালের পর গণতন্ত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপি মুক্ত গণমাধ্যমে বিশ্বাস করে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি সব সময় চেষ্টা করেছে গণমাধ্যমের সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক তৈরি করা। বিএনপি বিশ্বাস করে, স্বাধীন গণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া সম্ভব নয়। মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া একটি রাষ্ট্র কখনও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।’

আগামীতে গণমাধ্যম নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনা তুলে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মুক্ত গণমাধ্যমের অন্তরায় সব নিবর্তনমূলক আইন ও অধ্যাদেশ বাতিল করা হবে। প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতা ও পরিসর বৃদ্ধি করা হবে। গণমাধ্যমকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করা হবে। ওয়েজ বোর্ডের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এবং গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করা হবে।’

বর্তমান সরকারের ফ্যাসিবাদী অবস্থা থেকে দেশকে দ্রæত মুক্ত করতে পারবে বলে বিএনপি আশাবাদী মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘টানেলের মুখে আলো দেখা যাচ্ছে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ সব ধরনের নিবর্তনমূলক আইন ও অধ্যাদেশ বাতিল করবে। আমাদের পরিষ্কার ঘোষণা, আমরা সরকার গঠন করলে মুক্ত গণমাধ্যমের অন্তরায় ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’সহ সব ধরনের নিবর্তনমূলক আইন ও অধ্যাদেশ বাতিল করব। গণমাধ্যমে প্রকাশিত যেকোনো বিষয় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা সংস্থা প্রেস কাউন্সিলে ফয়সালা না করে কোনোভাবেই যেন আদালতে মামলা দায়ের করতে না পারেন সেটা নিশ্চিত করা হবে।

সভায় প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে একটা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়েছে। তাতে কিছু অঙ্গীকার করা হয়েছে। তাদের অঙ্গীকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে পারি, আশ্বস্ত হওয়ারও চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু আমাদের অতীত আশ্বস্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি নয়, বর্তমান তো নয়ই। স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকারই সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমবান্ধব ছিল না, এখনও নেই। স্বাধীনতার পরে যারাই সরকারে এসেছেÑ প্রথমে আওয়ামী লীগ সরকার, পরবর্তীকালে বিএনপি, এরপর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অথবা জাতীয় পার্টি, পরে আবার বিএনপি, আবার আওয়ামী লীগ, আবার বিএনপি এবং এখন আওয়ামী লীগ। বিএনপির আমলে জহুর হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়া, একুশে টিভি বন্ধ করে দেয়া, বিভিন্ন মতের পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন কমিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন উদাহরণও তিনি টানেন।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে যুগান্তরের জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক মাহবুব কামাল বলেন, বাংলাদেশের প্রেসের অবস্থা খুবই মারাত্মক। এর কারণটা হচ্ছে উইপেন অব ল অর্থাৎ আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা। বাংলাদেশে অসংখ্য আইন আছে, যা আমাদের দেশে স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থি, প্রত্যেকটি আইন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের জন্য পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে হুমকিস্বরূপ।

সোহরাব হোসেনের দেয়া বক্তব্য খণ্ডন করে বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘সোহরাব ভাই সঠিক তথ্য দেননি। সাংবাদিক জহুর হোসেন কারাগারে যাননি। তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর আদালতে আত্মসমপর্ণ করে জামিন নেন। একুশে টিভি বিএনপি সরকার বন্ধ করেনি। এটি টেরিস্টোরিয়াল সম্প্রচারের ইস্যুতে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে বন্ধ হয়েছে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের আমলে সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা দায়েরসহ সারাদেশে সাংবাদিকদের নির্যাতনের চিত্রও তুলে ধরেন বিএফইউজের এ শীর্ষ নেতা।’

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এবং শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় আলোচনা সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৭ মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্ত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, দিনকালের সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, এমএ আজিজ, নুরুল আমিন রোকন, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, কামাল উদ্দিন সবুজ, বাকের হোসাইন, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, সরদার ফরিদ আহমদ, কাদের গনি চৌধুরী, ইলিয়াস খান, শহীদুল ইসলাম, ইলিয়াস হোসেন, রফিকুল ইসলাম আজাদ, মুরসালিন নোমানী, শফিক আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০