রাজশাহীতে লিচুর বাম্পার ফলন ৩১ কোটি টাকার বিক্রির লক্ষ্য

মেহেদী হাসান, রাজশাহী: আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার রাজশাহী অঞ্চলে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে রসালো লিচু। এবার চাষও বেড়েছে। এ বছর লিচুর উৎপাদন লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ হাজার টনের বেশি। এসব জমি থেকে উৎপাদিত লিচুর দাম ধরা হয়েছে ৩১ কোটি টাকার বেশি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজশাহী জেলায় মোট ৫২৪ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি। এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ১৪৪ দশমিক ১০ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে প্রায় ৬ মেট্রিক টন। এসব জমি থেকে উৎপাদিত লিচুর দাম ধরা হয়েছে প্রায় ৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

চাষিরা বলছেন, অনুকূল আবহাওয়ায় এ বছর রাজশাহীতে লিচুর ফলন হয়েছে বাম্পার। সেই সঙ্গে লিচুর আকার ও রং বেশ লোভনীয়। মিষ্টি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। ক্রেতাদের কাছে আমের চেয়ে বর্তমানে লিচুর চাহিদা তুঙ্গে। এতে চাষি ও ব্যবসায়ীরা উভয়েই পোয়াবারো।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজশাহীর সাহেব বাজার, শালবাগান, খড়খড়ি, বানেশ্বর, লক্ষ্মীপুর, কোর্ট বাজার ও রাজশাহীর বাস টার্মিনালের ফল বাজারসহ অন্যান্য হাটবাজার সরেজমিন পরিদর্শন ও পর্যালোচনায় এ চিত্রের দেখা মিলেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথম দিকে রাজশাহীতে বাজারে ওঠে স্থানীয় গুটি জাতের লিচু। এসব লিচু আকারে ছোট, তুলনামূলক কম মাংসল ও বিচির আকার বড় হয়ে থাকে। স্বাদের দিক থেকে কিছুটা টক-মিষ্টি। মৌসুমের শুরুতে বাজারে আসায় দামও ছিল বেশ চড়া। মৌসুমের প্রথমে এসব লিচু বাজারভেদে বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। তবে ধীরে ধীরে দাম কমে বিক্রি হতে থাকে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়।

তবে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে উঠতে শুরু করে বোম্বে জাতের সুস্বাদু লিচু। এসব লিচুর আকার বেশ বড় এবং এজাতের লিচুর বিচি বেশ ছোট হয়ে থাকে। যার কারণে মাংসল অংশটিও অনেক বেশি। সপ্তাহজুড়ে বাজার ঘুরে দেখা গেছে দামের তারতম্য। রাজশাহী মহানগরীর কোর্ট, লক্ষ্মীপুর ও সাহেব বাজারে বোম্বের লিচু বিক্রি করতে দেখা গেছে ২৩০ থেকে সর্বোচ্চ ২৮০ টাকায়। তবে বানেশ্বর, কাঁটাখালী, খড়খড়ি ও শালবাগান এলাকায় ২২০ থেকে ২৩০ টাকা তুলনামূলক কমে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

জেলার পবা উপজেলার লিচুচাষি সামসুল ইসলাম বলেন, লিচু বাদুড়ের প্রিয় খাবার। নেটের জাল দিয়ে পুরো গাছ ভালোভাবে ঢেঁকে দিতে হয়েছে। প্রথম থেকেই এবার লিচুর দাম ভালো। বাগান থেকে খুচরার তুলনায় একটু কম দাম দেয়। ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে লিচু ভেঙে নিয়ে যায়। পরিবহন খরচ ছাড়াই যা পাই তাতেই ভালো হয়। এবার ফলনও ভালো হয়েছে। সবমিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ।

এদিকে নগরীর শিরোইল স্টেশন বাস টার্মিনালের ফলের দোকান ও রাস্তার পাশে বড় ঢালা ও ভ্যানে বিক্রি হওয়া লিচুর দাম অন্যান্য স্থানের চেয়ে একটু বেশি দেখা গেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গমনকারী যাত্রীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে এসব লিচু। এ কারণে বিক্রেতারা হাঁকছেন চড়া দাম। একশ লিচু তারা বিক্রি করছেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। তবে বিক্রেতাদের দাবি, তাদের লিচু অন্যান্য জায়গার লিচুর চেয়ে আকারে বড় ও সুস্বাদু। এ কারণে দাম বেশি। তাছাড়া গাড়িভাড়া ও লেবার খরচ বাড়তি থাকায় লিচুর দাম কিছু বেশি রাখতে হচ্ছে।

নগরীর টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের গেটের সামনে ভ্যানে করে লিচু বিক্রি করছিলেন দুজন। এখানে হেকমত আলী নামে এক লিচু ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে বাজারে যেগুলো আরও ভালো ও বড় সেগুলোর দাম ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

শালবাগানের ফল ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান রানা। শালবাগানে রয়েছে তার ফলের আড়ত। আম লিচুর মৌসুমে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে গাছের লিচু দেখে কিনছেন। আকার ও স্বাদ বুঝে বোম্বের লিচু চাষিদের কাছে থেকে নিচ্ছেন ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা হাজারে। লেবার খরচ, ভ্যানভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়।

লিচুর আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যকেন্দ্রের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, এ মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। ছোটখাটো সামান্য ঝড়-ঝাপ্টা হলেও রাজশাহী জেলা সেভাবে কালবৈশাখী ঝড়ের প্রভাব পড়েনি। তাছাড়া এ বছর আমাদের পক্ষ থেকে লিচুর ফেটে যাওয়া ও লিচু ছিদ্রকারী পোকার দমন বিষয়ে চাষিদের মধ্যে অনেক বেশি বেশি করে পরামর্শ ও প্রচারণা করা হয়েছে। এ বছর লিচুর জন্য মৌসুমটা ছিল অনুকূলে। যার কারণে এ মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে রাজশাহীতে লিচুর ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে হিসাব কষে দেখা গেছে ৪ হাজার টাকা মণ হিসেবে ৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকার লিচু বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০