রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন

‘সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে সড়ক, ভোগান্তির নেই শেষ’Ñশীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা পাঠকের মনোযোগ কাড়বে বলেই ধারণা। কাগজে-কলমে বর্ষা শুরু হতে এখনও ঢের বাকি। তা সত্তে¡ও জলাবদ্ধতায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির খবর গণমাধ্যমে আসতে শুরু হয়েছে।

শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘদিন তদারকি না থাকায় ময়লা-বর্জ্যে নর্দমা পরিপূর্ণ। পানি নিষ্কাশনের জন্য নেই প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা। ফলে অল্প বৃষ্টিতে পানিতে কয়েক ঘণ্টার জন্য তলিয়ে যায় ধানমন্ডির জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) সামনের সড়ক। ভারী বর্ষণ হলে এ সড়ক ব্যবহারকারীদের ভোগান্তির কথা সহজেই অনুমেয়। বৃষ্টির পর পানি সরে যেতে লাগে ৫-৬ ঘণ্টা। এতে নায়েমের প্রশিক্ষক, প্রশিক্ষণার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। কয়েক বছর সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীর কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। মাঝে মধ্যে দেখা যায়, শিশুরা পানির ঢেউ ভেঙে হাসিমুখে স্কুলে যাচ্ছে, আবার রিকশা থেকে পড়ে যাত্রী ভিজে একাকার হয়ে কর্তৃপক্ষের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছে এমন বিপরীতধর্মী দৃশ্যও চোখে পড়ে। রাজধানী শহরের পানি নিষ্কাশনের মধ্যে মূল দায়িত্ব ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। প্রতিষ্ঠান দুটি সময়মতো নালা বা খাল পুরোপুরি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে, সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও জোর দিয়ে বলতে পারবেন না।

ঢাকার খাল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে এখন দুই সিটি করপোরেশন। গত বছরে জানুয়ারিতে ঢাকা শহরের সব খাল-নালার দায়িত্ব ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে পেয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। তখন নগরবাসী আশা করেছিল, খাল-নালার দখল ও বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাওয়া নিয়ে আর সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠবে না। ১৯৮৮ সালের আগে ঢাকার খালগুলো তদারকির দায়িত্ব ছিল তখনকার সিটি করপোরেশন। কিন্তু তা ছিল ওয়াসার কাছে। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে থাকায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় কোনো কাজ আটকে থাকবে না, এটিই ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু এখনও সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক ডুবে, নগরবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই। এমন খবরে মেয়রদ্বয় বিব্রত না হয়ে দায়িত্বশীল হতে হবে। নর্দমা-খাল নিয়মিত পরিষ্কার করা হলে তো জলাবদ্ধতা হওয়ার কথা নয়।

জলাবদ্ধতায় নগরবাসী আরেক সমস্যায়ও পড়েন। পুরো রাস্তা হেঁটে আসতে পারলেও সামান্য রাস্তা পার হয়ে বাসা পৌঁছাতে বাধ্য হয়েই রিকশা নিতে হয়। পানি যতক্ষণ জমা থাকে, ততক্ষণ অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়। অনেকে বলছেন, দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না নিলে এখানকার মানুষ স্বস্তি পাবেন না। রাজধানীর বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের মূল দায়িত্ব যেহেতু দুটি সিটি করপোরেশনের। আগে এ দায়িত্বে অনেকগুলো সংস্থার সংশ্লিষ্টতা থাকায় সমন্বয়হীনতার কথা বলে দায় এড়ানোর সুযোগ ছিল। এখন সে অজুহাতও দেখানো যাবে না। জলাবদ্ধতা দূর করতে সিটি করপোরেশনের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়পূর্বক স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। খাল এবং পরিকল্পিতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। সব জলাশয়ে পানির ধারণক্ষমতা ও প্রবাহ বাড়াতে হবে। রাজধানীর চারপাশের নদ-নদী খনন করলে পানির ধারণক্ষমতা বাড়বে। খনন করার আগে যথানিয়মে খাল, নালা ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কার করতে হবে। তার আগে দখল-দূষণ থেকে মুক্ত করতে রাজনৈতিক অঙ্গীকারও প্রয়োজন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০