বেড়েছে আটা-রসুনের দাম কমেছে মুরগির

নিজস্ব প্রতিবেদক:চলতি সপ্তাহে দেশের বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় আবারও বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে। বেশ কিছু পণ্যের দাম কেজিতে ৩০ টাকার বেশিও বেড়েছে। এর মধ্যে অন্যতম রসুন। গত তিন সপ্তাহ ধরে এই পণ্যটির দাম অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি রসুনের দাম বেড়েছে ৮০ টাকা। তবে কমেছে মুরগির দাম।

খুচরা দোকানিরা চলতি মাসের ১০ তারিখের দিকে ৪০ টাকা কেজি দরে দেশি রসুন বিক্রি করেছেন। এখন সেই রসুন ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। আর গত ১০ মে আমদানি করা রসুনের দাম ৯০ টাকা কেজি থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮০ টাকা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের  টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক মাসে প্রতি কেজি দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ৬৭ শতাংশ এবং আমদানি রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫৬ শতাংশ।

এদিকে বাজারে আবারও বেড়েছে আটার দাম। বিপণনকারী কোম্পানিগুলো আটার দুই কেজির প্যাকেটের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে ১০৮ থেকে ১১৫ টাকা, যা আগের চেয়ে ১২ থেকে ১৭ টাকা বেশি। এ হিসাবে প্রতি কেজি আটার দাম বেড়েছে ৬ থেকে সাড়ে ৮ টাকা।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহের সবচেয়ে কম দামি ৫৫ টাকা কেজি খোলা ময়দা এ সপ্তাহের বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে বেড়েছে তিন টাকা।

গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আটার দুই কেজির প্যাকেটের দাম রাখা হচ্ছে ১০৮ টাকা থেকে ১১৫ টাকা। বাজারে খোলা আটার কেজি ৫০ টাকার আশপাশে এবং বাজারভেদে খোলা ময়দা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির হিসাবে, এক বছরে আটার দাম ৪০ শতাংশ বেড়েছে। আর খোলা ও প্যাকেটজাত ময়দার দাম বেড়েছে ৪৯ থেকে ৬৬ শতাংশ। অবশ্য টিসিবি যে দর উল্লেখ করেছে, তা বাজারের নতুন দামের চেয়ে কম।

কোম্পানিগুলো আটার দাম বৃদ্ধি করেছে দেশে গমের দাম বেড়ে যাওয়ার পর। ভারত গত ১৪ মে নিজেদের বাজার সামাল দিতে গম রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এরপরই বাংলাদেশে আরেক দফা দাম বেড়ে যায়। তবে ভারত বলেছে, প্রতিবেশীরা গম পাবে। বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়ও বলছে, তারা ভারত থেকে গম আমদানি করতে পারবে।

গত সপ্তাহের মতো প্রতি লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। পাম অয়েলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা। আর বোতলের পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৮০ থেকে ৯৮৫ টাকা।

এদিকে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে আবারও বাড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। টিসিবির হিসাবে গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম

বেড়েছে কেজিতে ১১ শতাংশের মতো। এ ছাড়া ১৯০ টাকা কেজি হলুদ এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে।

বাজারে ফার্মের মুরগির লাল ডিমের দাম সাধারণত হালি ৩০ টাকার আশপাশে থাকে। এখন সেই ডিমের দাম প্রতি হালি ৪২ থেকে ৪৩ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহে ডিমের দাম নতুন করে ডজনে ১৫ টাকা বেড়েছে।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছেÑবেগুন ও গাজর। ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি গাজর বিক্রি করছেন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। আর প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৮০ টাকা কেজি। তবে  বরবটি ও কাঁকরোলের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম কমে এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে করলা। কাঁচা পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া পটোলের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঝিঙে ও চিচিঙ্গার কেজি  বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে।

এদিকে রমজান মাস থেকে পর্যন্ত গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এখনও গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মালিবাগ এলাকার গরুর মাংস বিক্রেতা মকবুল হোসেন বলেন,  ‘রমজান মাসে ৭০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করেছি। এরপর গরুর দাম বেড়েছে। ফলে মাংসের দাম কমানো যাচ্ছে না। তবে মহল্লার সাপ্তাহিক ব্যবসায়ীরা (যারা সাধারণত শুক্রবার মাংস বিক্রি করেন) গরুর মাংসের কেজি বিক্রি করছেন ৭২০ টাকা কেজি দরে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দামে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৬০০ টাকা এবং ৫০০-৬০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৬০ টাকা, শোল মাছের কেজি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, কৈ মাছের কেজি ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে মুরগির দাম কমেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা এবং পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬৫ টাকা। ঈদের আগে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা। অর্থাৎ ঈদের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্রয়লার মুরগির দাম কমছে।

ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি কমেছে সোনালী মুরগির দাম। শুক্রবার সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩১০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০