ক্ষমতাসীনরা চায়, পুলিশ তাদের কথামতো চলুক: সাবেক আইজিপি শহীদুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বলেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক শক্তি ও আমলাতন্ত্র কখনও পুলিশের পরিবর্তন চায় না। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল চায়, তারা যা বলবে পুলিশ তা-ই করবে। সংসদ সদস্য চান, তিনি যা বলবেন, ওসি সেটাই করবেন। এসব চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে কাজ করা খুবই কঠিন।

গতকাল রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে নিজের লেখা ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি: স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গি দমন’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক অপশক্তির কাছে মাথা নত করিনি। চেয়ার চেয়ে চাকরি করিনি। বদলি হয়েছি, চলে গিয়েছি।’

‘চাকরিতে থাকা অবস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পিছপা হইনি’ বলে দাবি করে সাবেক আইজিপি বলেন, ‘আমার মতো তো সবাই পারবে না। এজন্য একটা সিস্টেম বা পদ্ধতি চালু করা উচিত, যাতে পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে।

শহীদুল হক বলেন, ‘বিচারব্যবস্থার একটি অংশ পুলিশ। তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে না পারলে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম (ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা) কখনও কার্যকর হবে না। পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে না পারলে সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব নয়। পুলিশকে ঢেলে সাজানোর কথা বলা হয়। তবে এটি রাজনৈতিক কথা। কীভাবে ঢেলে সাজাতে হয়, সেটা আমি জানি না।’

সাবেক পুলিশপ্রধান বলেন, ‘পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হলে আইনের সংস্কার প্রয়োজন। আমি দায়িত্বে থাকাকালে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু হয়নি। সেখানে পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব যেমন ছিল, তেমনি পুলিশ কমপ্লেইন কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব ছিল। পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, একটি স্বাধীন স্বতন্ত্র সংস্থা সেটির তদন্ত করবে। কিন্তু আমলাদের কারণে সেটি হয়নি। আর রাজনীতিকেরা তো চাইবেই না। রাজনৈতিক ও আমলাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন না ঘটলে সুশাসনের কথাটি শুধু সেøাগানেই থাকবে।’

পুলিশকে অনেক বৈরী পরিবেশে কাজ করতে হয় বলে জানিয়ে শহীদুল হক আরও বলেন, ‘সবাই পুলিশের সেবা চায়, কিন্তু কেউ পুলিশকে পছন্দ করে না। পুলিশকে ভয় পায়, কিন্তু পুলিশকে ভালো জানে না। আমি বইয়ে লিখেছি, বাতাসের মধ্যে বসবাস করি বলে অক্সিজেনের অভাব অনুভব করি না। তেমনি সমাজে পুলিশ আছে বলে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না। সরকার যদি ঘোষণা দেয়, দুই ঘণ্টার জন্য পুলিশের কোনো কার্যক্রম থাকবে না, তাহলে দেশে কী পরিস্থিতি হবে, সেটি আমরা অনুভব করি না।’

বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা দেন কথাসাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বইটির প্রকাশক দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন প্রমুখ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০