শেয়ার বিজ ডেস্ক: কভিড-১৯ মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এক জরুরি সভায় চীনের এক লাখ কর্মকর্তা অংশ নিয়েছেন। গত বুধবার (২৫ মে) এ সভায় তারা অংশ নেন। খবর: সিএনএন।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, শীর্ষ নেতাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভা এ সভার আয়োজন করে। এই অপ্রত্যাশিত সভায় অংশ নেন দেশটির সব প্রদেশ, শহর ও কাউন্সিল পর্যায়ের নেতারা। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উচ্চপর্যায়ের চীনা কর্মকর্তারাও এতে অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন প্রিমিয়ার লি কেপিয়াং। তিনি কর্তৃপক্ষকে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও বেকারত্বের হার কমানোর আর্জি জানান।
২০২০ সালের পর চলতি বছর মার্চে ফের কভিডজনিত লকডাউনের কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশটির অনেক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশটির বৃহত্তম বাণিজ্যিক শহর সাংহাই। গত মার্চে প্রথম দুই বছরের মধ্যে প্রথমবার শহরটিতে লকডাউন দেয়া হয়। জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে এই শহর চালু রাখা জরুরি।
লি জানান, কিছু ক্ষেত্রে ২০২০ সালে প্রথম লকডাউন দেয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় চলতি বছর মার্চ ও এপ্রিলে। তিনি বেকারত্বের হার, নিন্ম উৎপাদন ও সরবরার সংকটের মতো কয়েকটি নির্দেশককে চিহ্নিত করেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় অর্থনৈতিক দুর্দশা নিয়ে উচ্চকিত ছিলেন তিনি। চলতি মাসের শুরুতে উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিকে ‘জটিল ও বিপর্যয়কর’ বলে আখ্যা দেন তিনি।
চলতি বছরের অর্থনীতি নিয়ে বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোও নেতিবাচক পূর্বাভাস দিয়েছে। বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএস তাদের পূর্বাভাসে বার্ষিক জিডিপির প্রবৃদ্ধি তিন শতাংশের কম দেখিয়েছে। ব্যাংকটি বেইজিংয়ের ‘শূন্য কভিড’ নীতি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। তবে দেশটির কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি বছর তাদের প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। গত বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১ শতাংশ, ২০২০ সালে যা ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ (এক দশকের মধ্যে সর্বনি¤œ)।
এক প্রতিবেদনে সরকার-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম সিনহুয়া জানায়, গত ২৩ মে স্টেট কাউন্সিল নির্বাহীদের এক টেলিকনফারেন্সে ৩৩টি অর্থনৈতিক পরিমাপ নির্ধারণ করা হয়, যার মধ্যে করহার বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণহার বাড়ানো ও উড়োজাহাজ শিল্পে জরুরি ঋণ বিতরণের বিষয় রয়েছে। এই ৩৩টি নীতির মধ্যে বিধিনিষেধ তুলে দেয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে তুলনামূলক ঝুঁকিহীন এলাকায় ট্রাক চলাচল করতে পারে।
গত বুধবারের জরুরি সভায় এই ৩৩টি নীতিকে শিগগির বাস্তবে রূপ দেয়ার কথা জানান লি। স্টেট কাউন্সিল এজন্য ১২টি প্রদেশে টাস্ক ফোর্স পাঠাবে যেন সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করা যায়। মহামারিতে কঠোর ‘শূন্য কভিড’ নীতি আরোপ করা হয়, যাতে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ, বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন, গণকভিড পরীক্ষা ও লকডাউনের মতো বিষয়গুলো ছিল। তবে এসব কৌশলকে চ্যালেঞ্জে ফেলে দেয় ওমিক্রন ধরন, ফলে বছরের শুরুতে কয়েকটি শহর ও প্রদেশের সীমান্তে বিধিনিষেধ দেয়া হয়। চলতি মাসের মাঝামাঝি ৩০টির বেশ শহরকে পূর্ণ বা আংশিক লকডাউনের আওতায় আনা হয়। এতে দেশের ২২ কোটি মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শিল্প খাতের বৃহৎ থেকে ক্ষুদ্রÑসব ধরনের ব্যবসায় সরবরাহ ও চাহিদায় ধস নামে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি চালু হলেও ক্ষতির রেশ রয়ে গেছে। একই সঙ্গে ২০২০ সালের মতো বেড়েছে বেকারত্বের হার। টেসলা ও ভোকসওয়াগনের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। এয়ারবিএনবিও তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সীমিত করার চিন্তা করছে। এতে দেশটির সংকট স্পষ্ট ফুটে ওঠেনি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সাম্প্রতিক সময়ে বেইজিংয়েও কভিড শনাক্ত রোগী বেড়েছে। এ কারণে গত সোমবার রাজধানীর সাতটি শহরে আংশিক লকডাউন দেয়া হয়েছে, এতে ক্ষতিতে পড়েছেন এক কোটি ৪০ লাখ মানুষ। চ্যাওইয়াং ও হেইডিয়ানের মতো বড় জেলায় শপিংমল, ব্যায়ামাগার ও বিনোদনকেন্দ্র জোর করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।