নিজস্ব প্রতিবেদক : সবুজ পতাকা নাড়িয়ে সংকেত দিলেন ভারত ও বাংলাদেশের রেলমন্ত্রীরা; ৫৭ বছর পর চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেলপথে নতুন স্পন্দন তুলে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে এলো প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস। গতকাল দিল্লিতে ভারতের রেলওয়ে বোর্ডের সম্মেলন কক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিউ জলপাইগুড়ি জংশনে মিতালী এক্সপ্রেসের প্রথম যাত্রার আনুষ্ঠানিকতা সারেন ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তারা দিল্লি থেকে পতাকা নেড়ে সংকেত দিলে হুইসেল বাজিয়ে চলতে শুরু করে ট্রেন। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে চালু হওয়া তৃতীয় যাত্রীবাহী ট্রেন এটি।
মিতালী এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরুর এই মুহূর্তকে দুই দেশের রেল সহযোগিতার ইতিহাসে একটি ‘মাইলফলক’ হিসেবে বর্ণনা করেন ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। ব্রিটিশ আমল থেকেই চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দার্জিলিং থেকে খুলনা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত এ রেলপথে নিয়মিত চলাচল করত একাধিক যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন। ১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের পর তা বন্ধ করে দেয়া হয়।
ব্রিটিশদের ঐতিহ্যবাহী দার্জিলিং মেইলের ‘ঝক ঝক ঝক’ পথচলাও এই রুটে দেখেছে দুই বাংলার মানুষ। ৫৫ বছর পর ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের ভার্চুয়াল দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে এই রেলপথ উদ্বোধন করেছিলেন। এর সাড়ে সাত মাস পর গত ১ আগস্ট শুরু হয় পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল।
এর মধ্যে ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে তৃতীয় ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করা হয়। কভিড মহামারির ধাক্কা পেরিয়ে ১৪ মাসের মাথায় তা চালু হলো।
মিতালী এক্সপ্রেসের পতাকা ওড়ানোর অনুষ্ঠানে ভারতের রেলমন্ত্রী বলেন, একীভূত ঐতিহ্য, একীভ‚ত বর্তমান ও একীভ‚ত ভবিষ্যতের ওপর গড়ে উঠেছে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক। সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিন্ম সব পর্যায়ে দুদেশের সম্পর্ক বর্তমানে বেশ বেগবান। এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে এবং এই বন্ধনকে আরও জোরালো করার ক্ষেত্রে মিতালী এক্সপ্রেস গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকের ভ‚মিকা রাখবে।
রেলে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের সংখ্যা গত কয়েক বছরে বাড়ার কথা তুলে ধরে অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, কয়েক বছর আগেও মাত্র ৭০০ মালবাহী ট্রেন চলত। এই সংখ্যা এখন এক হাজার ৬০০টির মতো।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্তের অক্ষরে লেখা। বর্তমানে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক বেশি গভীর হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর যে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে রেলওয়ে তালিকার শুরুতেই ছিল বলে জানিয়ে তিনি বলেন, রেললাইন, রেলব্রিজ ও রেলের বিভিন্ন কারখানা সব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ভারতের সহযোগিতায় সেসময় আমরা রেলব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করেছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা রেলকে অবজ্ঞা করেছে।
মিতালী এক্সপ্রেস সপ্তাহে দুদিনের পরিবর্তে তিন দিন করা যায় কি না, সেটি ভেবে দেখার পরামর্শ অনুষ্ঠানে দেন সুজন। সরকার একক লাইন থেকে পুরো রেলওয়েকে ডাবল লাইনে রূপান্তরের কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়ে রেল খাতে ভারতের জোরালো সহযোগিতা চান তিনি।
রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, ভারত তার রেলব্যবস্থাকে যেভাবে গড়ে তুলেছে, আমি বিভিন্ন জায়গা ঘুরেছি, তাদের নিজেদের সামর্থ্য, প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে গড়ে তুলেছে, তাতে আমি অভিভ‚ত। ভারতের রেলব্যবস্থা তাদের যে অভিজ্ঞতা, তা যদি বাংলাদেশের রেলওয়ের জন্য কাজে লাগাতে পারি, আমরা উভয়ে উপকৃত হতে পারব। ভারতের পাশাপাশি প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের সঙ্গেও রেল যোগাযোগ তৈরিতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।