পাকিস্তানে প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ৬০৫ রুপি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: পাকিস্তানে আচমকা ভোজ্যতেলের দাম এক লাফে লিটারপ্রতি ২১৩ রুপি বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে শাহবাজ শরিফের সরকার। এতে ভোজ্যতেলের সরকার-নির্ধারিত দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০৫ রুপিতে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৭২ টাকা)। আর ঘিয়ের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০৮ রুপি। ফলে প্রতি কেজি ঘিয়ের দাম দাঁড়িয়েছে ৫৫৫ রুপি। খবর: ডন।

পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম ডন গতকাল এক প্রতিবেদনে জানায়, ঘি ও ভোজ্যতেল উৎপাদনকারীরা রাষ্ট্রীয় সুপারশপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউটিলিটি স্টোর করপোরেশনকে (ইউএসসি) ধারে পণ্য দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কেননা তাদের ২০০ থেকে ৩০০ কোটি রুপির ঋণ পরিশোধ করেনি সংস্থাটি। তাই সাধারণ মানুষের পকেট থেকে রাজস্ব ভরাতে ভোজ্যতেল ও ঘিয়ের দাম এক লাফে অনেকটা বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এখন থেকে সরকার পরিচালিত ইউটিলিটি স্টোরগুলোয় ঘি প্রতি কেজি ৫৫৫ রুপি ও ভোজ্যতেল প্রতি লিটার ৬০৫ রুপিতে বিক্রি করা হবে।

তবে শুধু সরকার পরিচালিত সুপারশপই নয়, দেশের সাধারণ বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আরও বাড়বে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পাকিস্তান বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (পিভিএমএ) মহাসচিব উমর ইসলাম খান। তার কথায়, করাচি বন্দরে বর্তমানে মাত্র এক লাখ ৬০ হাজার টন পাম তেল মজুত রয়েছে, যা তিন সপ্তাহের চাহিদা মেটাতে পারবে। যদি এর মধ্যে বিদেশ থেকে ভোজ্যতেল না আনা যায়, তাহলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। তবে গত ২৩ মে ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর পর থেকে দেশটির বন্দরে পাকিস্তানের কোনো জাহাজে তেল আসেনি। এমনকি কোনো জাহাজও পাকিস্তানের পথে আসেনি।

পাকিস্তানের পাম অয়েল আমদানির ৮৭ ভাগ আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাকিটা মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। ইন্দোনেশিয়ায় পাম অয়েলের দাম টনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ ডলার কমেছে। তবে বাড়তি দামে বুকিং দেয়ায় এবং রুপির মান কমায় আমদানি খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ঘি ও ভোজ্যতেলের দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানান উমর ইসলাম। ইন্দোনেশিয়ায় দুই মাসের ব্যবধানে প্রতি টন পাম তেলের দাম এক হাজার ৯০০ ডলার থেকে কমে এক হাজার ৭০০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। তাহলে পাকিস্তানে কেন ভোজ্যতেলের দাম কমছে নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে উমর ইসলাম বলেন, তেলের শিপমেন্ট বুক করা হয়েছিল বাড়তি দামে। তাছাড়া পাকিস্তানি রুপির অবমূল্যায়নেও ল্যান্ডিং খরচ বেড়ে গেছে। উমর জানান, প্রধানমন্ত্রী টাস্কফোর্স কমিটি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পিভিএমএ’র কর্মকর্তারা বাজারে পাম তেলের চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি বিশ্লেষণে প্রতিদিন জুম মিটিং করছেন।

একসঙ্গে ভোজ্যতেলের দাম এত বেশি বাড়ানোর ঘটনা দেশটিতে নজিরবিহীন। যদিও নতুন দাম এখনও খুচরা বাজারে কার্যকর হতে দেখা যায়নি। নির্দয়ভাবে এভাবে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে কর্মকর্তারা কিছু বলছেন না। ভোজ্যতেলের এভাবে মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তাদের বিপদে ফেলবে বলে মনে করছে সচেতন মহল।

বৈদেশিক ঋণে জর্জর পাকিস্তানের অর্থনীতিতে সংকট চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয় দেশটি। আইএমএফ ঋণ পেতে জ্বালানির ওপর ভর্তুকি তুলে নেয়ার শর্ত দিয়েছে। এতে এক ধাক্কায় পেট্রল ও ডিজেলের দাম ৩০ রুপি বেড়ে যায়। রুপির অবমূল্যায়নের পাশাপাশি লাগামহীন মূল্যস্ফীতির কারণে আগে থেকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছিল। তার ওপর জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ছিল মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। ভোজ্যতেলের রেকর্ড মূল্যের কারণে নিত্যপণ্যের ব্যয় মেটানো এখন সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন হবে।

গত বছর দেশটির কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে পাকিস্তানের ভোজ্যতেল আমদানি এর আগের বছরের তুলনায় লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়তে পারে। দেশটিতে ভোজ্যতেলের ব্যবহার বাড়লেও উৎপাদনে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। এ কারণে আমদানি বাড়াচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি থাকায় দেশটির ভোজ্যতেল আমদানি ব্যয়ও ঊর্ধ্বমুখী। প্রসঙ্গত, পাকিস্তানে মাথাপিছু ভোজ্যতেল ব্যবহারের হার ২৪ কেজি। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ মাথাপিছু ব্যবহার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০