মনির হোসেন মাহিন, রাবি :ঈদুল ফিতরের পর থেকে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখিয়ে চড়া দামে খাবার বিক্রি করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) অভ্যন্তরের থাকা হোটেল মালিকরা। তবে তা বন্ধে প্রশাসন থেকে কোনো রকম কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ফলে ক্যাম্পাসের দোকানগুলোর খাবারের দাম দিন দিন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সব ধরনের খাবারের দাম বাড়িয়েছে দোকান মালিকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরের দোকানগুলোতে পরোটা, সিঙ্গাড়া, পুরি ৭ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে যা আগে ৫ টাকায় বিক্রি করা হতো। ঈদের আগে খিচুড়ি ও ভাত যথাক্রমে ১৫ ও ১০ টাকা করে প্লেট বিক্রি করা হলেও এখন তা ২০ ও ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তরকারির আইটেমগুলোতেও চড়া দাম রাখছেন বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। তারা বলছেন, তেলের দামসহ কিছু দ্রব্যের দাম বেড়েছে কিন্তু শাকসবজি ও চালের দাম আগের মতোই আছে। দোকানিরা খাবারে দাম বাড়ালেও খাবারে গুণগত মান ও পরিমাণ বাড়ায়নি। এতে বিভিন্ন সময়ে দাম ও মান নিয়ে দোকানগুলোর সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে বাবুর হোটেলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদের পর থেকে সব কিছুই চড়া দামে বিক্রি করছেন ওই বিক্রেতা, তার দোকানের পাশেই স্টেশন বাজারে ভাতের প্লেট ১০ টাকা বিক্রি করা হলেও তিনি বিক্রি করছেন ১৫ টাকা প্লেট করে। হাফ প্লেট ভাতের দাম আগের মতো ৫ টাকা করে রাখা হলেও তার পরিমাণ খুবই কমানো হয়েছে যাতে এক মুষ্টি ভাত থাকে না বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। ১ পিস মাছের দাম আগে যেখানে রাখা হতো ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা রাখা হচ্ছে। মুরগির ক্ষেত্রেও ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছেন এ বিক্রেতা।
এদিকে খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে অন্যান্য জিনিসগুলোতেও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন দোকান বিক্রেতারা কিন্তু তা বন্ধে প্রশাসন কোনো রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে খাবারের দাম না বাড়ালেও খাবারের গুণগত মান ও পরিমাণ আগের তুলনায় অনেকাংশে কমিয়ে ফেলা হয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীরা পেট ভরে খাবার খেতে পারছে না।
লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মিলন শেয়ার বিজকে বলেন, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়িয়েছে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত সব দোকানিরা। খাবারের মূল্য নির্ধারিত না থাকায় নিজেদের ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছে তারা। ক্যাম্পাসের বটতলায় মিজানের দোকানে যে ভাত ১০ টাকা প্লেট, টুকিটাকিতে সে ভাত ১৫ টাকা। দুইটা পরটা আর ভাজি ২৪ টাকা, যা আগে ১৫ টাকায় পাওয়া যেত। এত চড়া দামে খাবার কিনে খাওয়া আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই কষ্টকর।
নিয়মিত দোকানগুলোতে প্রশাসনের মনিটরিংয়ের অভাবে দোকানিরা ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছে অভিযোগ করে গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম ধ্রæব বলেন, প্রশাসন যদি নিয়মিত দোকানগুলো মনিটরিং করত তাহলে শিক্ষার্থীরা অনেকটাই রেহাই পেত। একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্য এক বেলায় খাবারে ৫০-৬০ টাকা খরচ পড়ে যায় খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের বাবু হোটেলের মালিক মো. বাবু মিয়া শেয়ার বিজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে দাম বেশি বাড়ায়নি। তবে ভাতের দাম ১৫ টাকা করে বিক্রি করছিলাম তবে এখন থেকে আবার ১০ টাকা করে বিক্রি করব। জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাছ মুরগির দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
টুকিটাকি চত্বরের মনির নামের হোটেল মালিক শেয়ার বিজকে বলেন, দামের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে আমাদের লোকসান হলেও ব্যবসায় চালিয়ে যেতে হয়। লোকসান করেও আমরা ব্যবসা করছি। তবে দাম বাড়ালেও আগের মতো আমাদের ব্যবসা হচ্ছে না। আগে শিক্ষার্থীরা বেশি খরচ করত। এখন দাম বাড়ার ফলে তারাও খরচ করা কমিয়ে দিয়েছে। আমাদের খাবারের মান ভালো তবুও আমরা আগের মতো ব্যবসা করতে পারছি না বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, আমি ইতোমধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে অবগত। ঈদের আগে খাবারের দোকানগুলোতে মূল্য তালিকা করে দেয়া হয়েছে তা অনেকেই মানছে না। প্রক্টোরিয়াল টিম নিয়ে আমরা আলোচনায় বসব। আলোচনা শেষে আমরা দোকানগুলোতে অভিযান চালাব এবং তা বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবো।