শিশুরা দেশ জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। দেশকে অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এক দিন তারাই পালন করবে। তাই আগামী দিনের জন্য শিশুকে যোগ্য নাগরিক, নেতা হিসেবে গড়ে তোলা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
গতকাল শেয়ার বিজের প্রকাশিত ‘এবারও উপেক্ষিত শিশুদের বাজেট’ শীর্ষক প্রতিবেদন আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা সামনে এনেছে। ২০১৩ সালের শিশু আইন অনুযায়ী, শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর শিশু হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ এই বয়সভিত্তিক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তাদের জন্য বাজেটের ২০ শতাংশ ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের। ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত শিশুদের জন্য বরাদ্দ ছিল বাজেটের ১৫ শতাংশের মতো। বিষয়টি বাজেটে পৃথক একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু পরপর তিন অর্থবছরে শিশু বাজেট বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে না। এমনকি গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট ঘোষণা করেছেন, সেখানে শিশু বাজেটের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। ফলে দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধাররা উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে বাজেটে।
কভিড-১৯ হচ্ছে আমাদের কালের সত্যিকারের বৈশ্বিক সংকট। মহামারিটি হয়তো রোগ হিসেবে শিশুদের কাবু করতে পারেনি কিন্তু এর অভিঘাতে শিশুরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের প্রাণশক্তি, চাঞ্চল্য ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কভিডকালে পড়া নেই, খেলা নেই, বাইরে যাওয়া নেই; সবই শিশুর স্বভাববিরোধী। প্রয়োজনের তাগিদে পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মতো ন্যূনতম জ্ঞানও তাদের নেই। কভিডকালে এ বোধ ও বাস্তবতা আমরা উপলব্ধি করেছি, বাজেট স্বল্পতা, অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করে শিশুদের সুরক্ষায় একটি বাস্তবভিত্তিক ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন। কোনো সমস্যা-সংকটে যেন শিশুদের ক্ষতি না হয়, তারা যেন মনোবল না হারায়। শিশুরা যেন হতাশ না হয়, বরং উচ্চাকাক্সক্ষী ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে সামেনে এগিয়ে যেতে পারে। সে লক্ষ্যে তাদের ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ রক্ষায় বিষয়টিও সামনে এসেছে
২০১৫-১৬ অর্থবছরে পাঁচটি মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে শিশুদের জন্য আলাদা শিশু বাজেট প্রণীত হয়। এটি সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। এখন এ বাজেট আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। অথচ তা শিশু বাজেট প্রণীতই হচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকার গৃহীত রূপকল্প ২০২১, ৭নং অনুচ্ছেদের ক, গ, ঘ, ঙ, চ উপধারা যথাক্রমে মৌলিক চাহিদা পূরণ, দারিদ্র্য নিরসন, খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য অর্জনে শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন সময়ের দাবি। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশকে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনায় না আনলে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন সম্ভব নয়।
শিশুদের জন্য অর্থ বরাদ্দ যথেষ্ট কি না, সেটির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বরাদ্দ যথানিয়মে খরচ হচ্ছে কি না। ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্তত ১৫ দেশে শিশুদের জন্য আলাদা বাজেট প্রণয়ন করা হয়। যেহেতু শিশুদের উদ্দেশে বিনিয়োগ উচ্চ অর্থনৈতিক মুনাফা হিসেবে ফিরে আসে, সেহেতু শিশু বাজেট প্রণয়ন এবং এর পূর্ণ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
শিশু বাজেট প্রতিবেদন প্রণয়নে গুরুত্ব দিন
