দুই ব্যাংকের ২১৫ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা অংকুর সীড

জয়নাল আবেদিন: রাষ্ট্রায়ত্ত দুই ব্যাংক থেকে ২১৫ কোটি টাকা লুট করেছে অংকুর সীড অ্যান্ড হিমাগার লিমিটেড। ঋণ নেয়ার সময় হিমাগারের মালিক নিয়েছিলেন প্রতারণার আশ্রয়। টাকা হাতে পেয়ে তিনি পাড়ি জমিয়েছেন পশ্চিমের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। এতে আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ঋণ। কারণ জামানত রাখা সম্পত্তির মূল্য ঋণের তুলনায় খুবই কম। আবার একই সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছেন দুই ব্যাংক থেকে।

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কারণ এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য দুদকের কাছে অভিযোগ করেছেন এক নারী। ব্যাংক ও গ্রাহকের যোগসাজশে এই ঋণ বিতরণ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

অভিযোগের ওই চিঠি থেকে জানা যায়, অংকুর সীড অ্যান্ড হিমাগার লি. ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তাদের কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো অডিট করানো হয়নি। সে মোতাবেক কোটি কোটি টাকা মুনাফা করলেও সরকারি কোষাগারে কোনো কর পরিশোধ করেনি। এছাড়া রূপালী ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) থেকে অনিয়ম করে যে বিপুল পরিমাণ ঋণ বের করে নিয়েছেন, তার কোনো কিস্তি পরিশোধ করেননি।

তিন-চারবার করে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণগুলো পুনঃতফসিল করা হলেও কোনো কিস্তির টাকা পরিশোধ করা হয়নি। বরং দীর্ঘদিনের খেলাপি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, নীলফামারী শাখার ঋণটি প্রায় ২৩ কোটি টাকা সুদ মওকুফসহ পুনঃতফসিল করে রূপালী ব্যাংক, লোকাল প্রিন্সিপাল শাখা, ঢাকা থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এর বিপরীতে জামানত হিসেবে রাখা হয়েছে একই জমি।

তথ্যমতে, অংকুর সীড অ্যান্ড হিমাগার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা সুলতানা (চেয়ারম্যানের স্ত্রী), পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান ও পাড়া রেহান। প্রতিষ্ঠানটির সব পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। শুধু ঋণ নেয়ার জন্য মোহাম্মদ সেলিম একা বাংলাদেশে আসেন এবং সব উদ্যোক্তার স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন।

অংকুর সীড অ্যান্ড হিমাগারের মালিকরা রূপালী ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে অন্যত্র পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ করেন ওই নারী। তার অভিযোগ, অংকুর সীড অ্যান্ড হিমাগার লিমিটেডের মালিক মো. সেলিমের রূপালী ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই। তিনি বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতিষ্ঠান মূল্যের কয়েকগুণ বেশি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ বের করে নেন। সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ না করে বিভিন্ন উপায়ে সংঘবদ্ধভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা হাতিয়ে নেন।

তথ্যমতে, অংকুর সীড অ্যান্ড হিমাগারের নামে ২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের নীলফামারী শাখা থেকে মোট ৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন মোহাম্মদ সেলিম। এর বিপরীতে জামানত রাখা সম্পদের মূল্য ২০ কোটি টাকা। সুদে-আসলে সেই ঋণের পরিমাণ এখন ৬০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

রূপালী ব্যাংকের রংপুরের ধাপ শাখা থেকে ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে অংকুর সীড। জামানতের মূল্য ২২ কোটি। এখন সুদে-আসলে ৭৫ কোটিতে ঠেকেছে দায়। এছাড়া রূপালী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখা থেকে ৫৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন মোহাম্মদ সেলিম। তবে এই কোম্পানির নাম ছিল ব্রিং লেদার লিমিটেড, তারাগঞ্জ, রংপুর। সুদে-আসলে এই ঋণটির পরিমাণ এখন দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি টাকায়।

হিসাব বলছে, দুই ব্যাংক থেকে ৯২ কোটি টাকার সম্পদ দেখিয়ে ১৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মোহাম্মদ সেলিম। ঋণ পরিশোধ না করায় ওই ঋণের বর্তমান আকার দাঁড়িয়েছে ২১৫ কোটি টাকায়।

বিষয়টি স্বীকার করে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান জানান, আমরা ঋণগুলো আদায়ের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। টাকাগুলো আদায়ের বিষয়ে আশাবাদী রাকাব। অংকুর সীডের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্থঋণ আদালতে এরই মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এখন আইনি প্রক্রিয়ায় অর্থগুলো আদায়ের প্রচেষ্টায় রয়েছেন বলে জানান এমডি।

একাধিক ব্যাংকে এই জমি বন্ধক রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে অরিজিনাল ডকুমেন্ট আছে। কোনো ব্যাংক যদি একই সম্পদের ভুয়া ডকুমেন্ট দেখেও ঋণ দেয় তাহলে আর কী করার আছে? সম্পত্তি বিক্রি করে ঋণের অর্থ আদায়ের বিষয়ে আমরা আশাবাদী।

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবাইদুল্লাহ আল মাসুদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এসএমএস করলেও কোনো উত্তর দেননি তিনি। এছাড়া অংকুর সীডের মালিকরা বিদেশে থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০