জাকারিয়া পলাশ: রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য মানসম্পন্ন গণপরিবহন আমদানির সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এজন্য জাপানের রাস্তায় চলমান ৪-৫ বছরের পুরোনো এসি বাসগুলো আমদানির সুযোগ দাবি করে আসছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু আমদানি নীতিতে অসঙ্গতি থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। প্রাইভেট কারের পাশাপাশি বড় আকারের এসি বাসগুলো আমদানির সুযোগ পেলে দেশের গণপরিবহনের অবস্থায় উন্নতি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে প্রাইভেট কার আমদানিতেও অবচয়ের শর্ত কঠিন করে খাতকে ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
দেশের আমদানি নীতিতে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের পুরোনো গাড়ি আমদানির সুযোগ রয়েছে। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছোট গাড়ি বা প্রাইভেট কার ও মাইক্রেবাসগুলো আমদানি করে বাংলাদেশি আমদানিকারকরা। এসব গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত অবচয় সুবিধা পেয়ে আসছিলেন তারা। কিন্তু জাপানের কোনো এসি বাসই সাধারণত পাঁচ বছরের পুরোনো হলে আমদানি করা যায় না।
অবশ্য, চলতি অর্থবছরের বাজেটে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির অবচয় হার ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়, যার ফলে শ্রেণিভেদে গাড়ির দাম ৯০ হাজার টাকা থেকে নয় লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া গাড়ি আমদানিতে নানা সমস্যা উল্লেখ করে খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী তৈরির সালে আমদানি হলে এক বছর বয়স হলেও তাতে অবচয় সুবিধা দেওয়া হয় না। এ বছরের বাজেটে এ ছাড়া এক বছর পর্যন্ত রিকন্ডিশন্ড গাড়ির জন্য অবচয় শূন্য শতাংশে প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে পরপর দুই বছর অবচয় প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হতে হবে এ খাতের ক্রেতা ও উদ্যোক্তাদের। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী যে কোনো পণ্যের প্রথম বছর সর্বোচ্চ হারে অবচয় দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সে নিয়ম না মেনে পঞ্চম বছরের জন্য সর্বোচ্চ অবচয় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত ভালো গাড়ি আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।’
ছোট গাড়ি বা প্রাইভেট কার আমদানিতে এসব সমস্যা মোকাবিলা করেই আমদানি করা হয়। কিন্তু, প্রয়োজন এবং চাহিদা থাকা সত্ত্বেও রিকন্ডিশন্ড-এসি বাস আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, জাপানে উন্নতমানের এসি বাসগুলো নিবন্ধনের পর তা বাতিল হতে (ডি-রেজিস্ট্রেশন) পাঁচ থেকে সাত বছর লেগে যায়। আর নিবন্ধন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ওইসব গাড়ির নিলাম হয় না। তাই সেগুলো আমদানির সুযোগ থাকে না। জাপান থেকে রিকন্ডিশন্ড এসি গাড়ি বাংলাদেশে আমদানি করতে হলে তাই আট থেকে ১০ বছরের পুরোনো গাড়ি আমদানির সুযোগ রাখা প্রয়োজন বলে মত দেন আমদানিকারকরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেল ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মানসম্মত বাস আমদানির জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করছি। আমরা অনুরোধ করছিলাম অন্তত ১০ বছরের পুরোনো বাস আমদানির সুযোগ আমাদের দেওয়া হোক। এটি করা হলে কয়েক বছরের মধ্যেই গণপরিবহনের তালিকায় আমরা মানসম্মত বাস সংযোজন করতে পারতাম।’
উদ্যোক্তারা জানান, গণপরিবহনের উন্নয়নে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশই রিকন্ডিশন্ড এসি বাস আমদানি করে থাকে। নিউজিল্যান্ড, ফিলিপিনস, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াও জাপান থেকে রিকন্ডিশন্ড এসি বাস আমদানি করে। কিন্তু বাংলাদেশে আদৌ কোনো রিকন্ডিশন্ড এসি বাস আমদানি হয় না। অথচ ভারত ও কোরিয়া থেকে বিভিন্ন এসি বাস এনে গণপরিবহনে যুক্ত করা হচ্ছে, যার আয়ুস্কাল ও সক্ষমতা খুবই কম। ফলে ধুঁকে ধুঁকে চলছে দেশের গণপরিবহন সেবা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যাত্রীসাধারণ।
এ প্রসঙ্গে বারভিডার সাবেক সভাপতি ও অটোকন গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ শরীফ শেয়ার বিজকে বলেন, বাস আমদানির ক্ষেত্রে বয়সসীমা নির্বিশেষে বা অন্তত ১০ বছরের পুরোনো বাস আমদানির সুযোগ দেওয়া উচিত। এটি না হলে উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত নাগরিকদের গণপরিবহন ব্যবহারে আগ্রহী করা সম্ভব হবে না। অথচ রাজধানীসহ শহরগুলোয় জানজট নিরসনের জন্য গণপরিবহন বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
গাড়ির এ আমদানিকারক আরও বলেন, প্রাইভেট কার কিনতে মানুষকে বাধা দেওয়া উচিত নয়। তবে দিনের বেলায় অফিস আদালত চলাকালে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের অবাধ স্বাধীনতা দেওয়ার মানে হয় না। যারা ব্যক্তিগত গাড়ি কেনেন তারা ছুটির দিনে বা মধ্যরাতে জরুরি ব্যবহারের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু কর্মব্যস্ত সময়ে মানষের চলাচলের জন্য গণপরিবহনের বিকল্প নেই। এজন্য যে কোনো উপায়ে গণপরিবহনের মান উন্নয়ন করতে হবে।
এজন্য বর্তমনের শুল্ক নির্ধারণ ও গাড়ির মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্য। কিন্তু ডব্লিউটিও’র মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করছে না বাংলাদেশ। সাধারণত খুচরা বাজারমূল্যকে ভিত্তি ধরে তার ওপর ট্রেড ডিসকাউন্ট দিতে হয়। এর সঙ্গে স্থানীয় শুল্ক, ডিলারের কমিশন ও পরিবহন খরচসহ কিছু ব্যয় যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ সেটি করছে না। সার্বিকভাবে ভোক্তা ও দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Add Comment