স্মরণীয়-বরণীয়

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী নীলিমা ইব্রাহিমের আজ বিংশতম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০২ সালের ১৮ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নীলিমা ইব্রাহিম  ১৯২১ সালের ১১ জানুয়ারি বাগেরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি খুলনা করোনেশন বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা (১৯৩৫), কলকাতা ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন থেকে আইএ (১৯৩৭) এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএবিটি (১৯৩৯) পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলা বিষয়ে এমএ (১৯৪৩) পাস করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম ‘বিহারীলাল মিত্র গবেষণা’ বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে ডক্টরেট অর্জন করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমিকায় ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটক’। একই বছর তিনি ঢাকার আলিয়ঁসে ফ্রঁসেস থেকে ইন্টারমিডিয়েট ইন ফ্রেন্স-এ ডিপ্লোমা লাভ করেন। নীলিমা ইব্রাহিম কলকাতার লরেটো হাউসে লেকচারার (১৯৪৩-৪৪) হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৭২ সালে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। তিনি বাংলা বিভাগের প্রধান (১৯৭১-৭৫), বাংলা একাডেমির অবৈতনিক মহাপরিচালক (১৯৭৪-৭৫) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষের (১৯৭১-৭৭) দায়িত্ব পালন করেন। নীলিমা ইব্রাহিম বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমাজকল্যাণ ও নারী উন্নয়ন সংস্থা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমির ফেলো এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সমিতি ও বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতির আজীবন সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ মহিলা সমিতিরও সভানেত্রী ছিলেন। দেশের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি বার্লিন, মিউনিক, মস্কো, হাঙ্গেরি ও মেক্সিকো ভ্রমণ করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্য এবং রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটি কর্তৃক নির্যাতিত নারী ও যুদ্ধশিশুদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেন তিনি। সাহিত্যের অনেক শাখায় বিচরণ ছিল তার। লিখেছেন ৩টি গবেষণামূলক গ্রন্থ, ৯টি ছোটগল্প, ৪টি উপন্যাস, ৬টি নাটক,  ১টি কথানাট্য, ২টি প্রবন্ধ, ২টি ভ্রমণকাহিনী  ৩টি অনুবাদকৃত গ্রন্থ। তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’। নীলিমা ইব্রাহিম সমাজকর্ম ও সাহিত্যে অনন্যসাধারণ অবদানের জন্য বেগম রোকেয়া পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকসহ বহু পুরস্কার ও পদকে ভূষিত হয়েছেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০