পদ্মায় পানি বাড়ায় ধাওয়াপাড়া ও নাজিরগঞ্জ রুটে ফেরি বন্ধ

খন্দকার রবিউল ইসলাম, রাজবাড়ী: অতি বৃষ্টি ও উজানের পানির কারণে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধাওয়াপাড়ার জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌ-ঘাট ও সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জৌকুড়া ও পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌরুটের ফেরি চলাচল ৪ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে এ নৌরুটে চলাচল করা যাত্রীরা পড়েছে চরম দুর্ভোগে।

দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ধাওয়াপাড়ার জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুট। এ রুট দিয়ে প্রতিদিন ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও সিরাজগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলার যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহন পারাপার হয়। নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে ঘাটটি বন্ধ থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে পার হচ্ছেন যাত্রীরা।

গতকাল রোববার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এ রুটে নদী পারাপারের জন্য যানবাহন এসে অন্য রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত বোঝাই ট্রলারে করে নদী পার হচ্ছেন। ট্রলারে মানুষের পাশাপাশি রিকশা-ভ্যান, মোটরসাইকেল, অটোরিকশাসহ ছোট ছোট অন্যান্য যানবাহনও পারাপার করা হচ্ছে। এ সুযোগে ট্রলারে ভাড়াও অনেক বেশি নেয়ার অভিযোগ যাত্রীদের। তাছাড়া ঘাট এলাকায় নদী পার হতে আসা মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে। যাত্রীরা ব্যাগ, লাগেজ মাথায় করে প্রায় আধা কিলোমিটার হেঁটে ট্রলারে উঠছেন। ট্রলারের অপেক্ষায় বসে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

মোটরসাইকেল আরোহী জাহিদুর রহমান বাবু জানান, পাবনা জেলার নাজির গঞ্জে আমার আত্মীয়ের বাড়ি। মাঝে মাঝেই এ পথে যাতায়াত করতে হয়। জরুরিভাবে পাবনায় যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এখানে এসে দেখি ফেরি চলাচল বন্ধ। ফেরি বন্ধ আমি জানতাম না কতটা সময় বসে থাকতে হবে জানি না। তাও পার হতে হবে ট্রলারে। একদিকে রাস্তা খারাপ, অপর দিকে ফেরি বন্ধ, জানি না আমার মতো এখানে আরও কত মানুষকে এমন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রী গামছা ব্যবসায়ী ইব্রহিম মোল্লা বলেন, ব্যবসার প্রয়োজনে পাবনার সাহাজাতপুর যেতে হয় প্রতি সপ্তাহে। আজও যাচ্ছি, দেড় ঘণ্টা বসে আছি ঘাটে। ট্রলার কখন ছাড়বে বুঝতে পারছি না। ট্রলার চালক বলছে যখন যাত্রী পরিপূর্ণ হবে তখনই ট্রলার ছেড়ে যাবে।

ঘাটকেন্দ্রিক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ৪ দিন ধরে এ ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে, যাত্রীরা যেমন পড়েছে ভোগান্তিতে, পাশাপাশি আমাদের মতো ছোট দোকানদারদের কেনাবেচা কমে গেছে। যার কারণে আমাদের ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। কবে নাগাদ এ ঘাট সচল হবে জানি না।

জানা গেছে, রাজবাড়ীর ধাওয়াপাড়া জৌকুড়া ও পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌরুটের ফেরি সার্ভিসটি রাজবাড়ী সড়ক বিভাগের আওতায় পরিচালিত হয়। প্রতিদিন এ রুট দিয়ে যাত্রীবাহী পরিবহনের পাশাপাশি ছোট বড় গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পারাপার হয়ে থাকে। পানি বৃদ্ধির কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে নৌপথের যোগাযোগ সচল করতে পাশেই পন্টুন ও ঘাটের কাজ করছে সড়ক বিভাগ।

দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সহজে ও কম সময়ে সড়ক যোগাযোগের জন্য পদ্মার ধাওয়াপাড়া ঘাটে গত ২০০০ সাল থেকে রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ছোট দু’টি ফেরি দিয়ে এ ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। এরপর থেকে এ পথে যোগাযোগ বাড়তে থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকরী উদ্যোগ না নেয়ায় ফেরি সার্ভিসের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। নাব্যতা সংকট, পানি বৃদ্ধি, ঘাট সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে কার্যক্রম। নৌরুটটি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগ উপসহকারী প্রকৌশলী এস এম আসাদুজ্জামান জানান, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে গত ১৬ জুন থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ধাওয়াপাড়ার জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুট সচল করতে ঘাটটিকে আগের জায়গাতে স্থান্তান্তর করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই আশা করি চালু হয়ে যাবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০