নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শর্ত সাপেক্ষে কোম্পানি করহারে ছাড় দেয়া হয়েছে। সেই ছাড়ের শর্ত শিথিল করার সুপারিশ করেছে এমসিসিআই। গতকাল বাজেট পরবর্তী গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিক্রিয়ায় এ সুপারিশ করা হয়েছে। বাজেটে পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানি করহার সাড়ে ২২ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া এক কোম্পানি করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ ও নন পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানি করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে শর্ত দেয়া হয়েছে, সমস্ত আয় ও গ্রহণ অবশ্যই ব্যাংকিং ট্রান্সফারের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে এবং সব ধরনের খরচ ও বিনিয়োগ (বার্ষিক ১২ লাখ টাকা নগদ লেনদেন ব্যতীত) ব্যাংকিং ট্রান্সফারের মাধ্যমে করতে হবে। করছাড়কে সাধুবাদ জানানো হলেও শর্তাবলি শিথিল করার সুপারিশ করে এমসিসিআই বলছে, শর্ত নির্ধারণে কোম্পানির ব্যবসায়ের ধরন, আকার, ফ্যাক্টরি, ডিপো ও বিক্রয়কর্মীর সংখ্যা এবং লেনদেনের পরিমাণকে যৌক্তিকভাবে বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।
এছাড়া মাঠ পর্যায়ে নিজস্ব বিক্রয়কর্মীর মাধ্যমে দোকানে দোকানে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রয়কারী রিটেইল বিজনেস ও সুপারশপের ক্ষেত্রে আয়প্রাপ্তি ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে নেয়ার অবাস্তবায়নযোগ্য শর্ত প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। আরও বলা হয়, দেশের ইনফরমাল অর্থনীতির পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে ১২ লাখ টাকার অধিক একক লেনদেনের ক্ষেত্রে সমস্ত আয় বা গ্রহণ এবং খরচ ও বিনিয়োগ ব্যাংকিং ট্রান্সফারের মাধ্যমে করতে হবে।
এমসিসিআই বলছে, আমাদের দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ ইনফরমাল ইকোনমিতে কাজ করেন এবং ডিজিপির অর্ধেকেরও বেশি আসে ইনফরমাল ইকোনমি থেকে। তাই ইনফরমাল ইকোনমির সঙ্গে সম্পর্ক হঠাৎ করে ছিন্ন করে ব্যবসা চালানো অবাস্তব ও অসম্ভব।
বাজেটে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ১২ ডিজিটের ই-টিআইএন সনদ প্রদর্শন করার পরিবর্তে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এমসিসিআই বলছে, এর প্রশাসনিক ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। সে জন্য রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র প্রদর্শনের পরিবর্তে ই-টিআইএন সনদ প্রদর্শনের ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়।
অন্যদিকে, রপ্তানিতে উৎসে পূর্বাবস্থায় দশমিক ৫০ শতাংশ করা, পরিবহন ও ট্রান্সপোর্ট সেবার ক্ষেত্রে করহার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা, ব্যবসায়িক পণ্য সরবরাহ, পুস্তক সরবরাহসহ কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সø্যাব অনুযায়ী উৎসে কর কর্তনের হার বিবেচনা করার সুপারিশ করা হয়।
বাজেটে ভ্যাট আইন ও ভ্যাট বিষয়ে কিছু সংশোধনীর সুপারিশ করে এমসিসিআই। এর মধ্যে অন্যতম হলোÑকেন্দ্রীয় নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংজ্ঞার সংশোধন। এমসিসিআই’র সংশোধন বিষয়ে বলছে, কেন্দ্রীয় নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান অর্থ পণ্য বা সেবা বা উভয়ের সরবরাহ-সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সব হিসাব-নিকাশ ও রেকর্ডপত্র যেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত বা সংরক্ষিত হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, অভিন্ন ও সমজাতীয় পণ্য বা সেবা নির্ধারণ করা বাস্তবে সত্যিই দুরূহ। এর ফলে বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে এবং নিবন্ধন-সংক্রান্ত জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম এর ভিত্তিতে নিবন্ধন হওয়া যুক্তিযুক্ত। বিশেষ ক্ষেত্রে এনবিআর কমিশনারের পরামর্শক্রমে নির্দিষ্ট কোনো ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে আলাদাভাবে নিবন্ধন নিতে পারবে। এছাড়া ভ্যাট-সংক্রান্ত আরও ১০টি সংশোধনী আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে আমদানি পর্যায়ে মেশিনের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ, কারখানায় প্রস্তুতকৃত মালামাল রাখার তাক, কারখানার অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সরঞ্জামাদি আমদানি ১ শতাংশের সঙ্গে ১ শতাংশ রেয়াতি সুবিধা রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।